eibela24.com
শুক্রবার, ২৯, মার্চ, ২০২৪
 

 
শ্রমিক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের ২৬ কোটি টাকা লোপাট
আপডেট: ০৩:৩৫ pm ২৬-০৮-২০২২
 
 


গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের ২৬ কোটি টাকা লোপাটের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিষ্ঠানটিতে গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট নিজেদের নামে খোলা ব্যাংক হিসাবে এই টাকা স্থানান্তরের পর ভাগবাটোয়ারা করে নেন।

দুদকে জমা দেয়া গ্রামীণ টেলিকমের ১১ ধরনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের পর বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও দুই আইনজীবীকে জিজ্ঞাসাবাদে অর্থ লোপাটের এই তথ্য নিশ্চিত হয়েছে অনুসন্ধান টিম।

বেলা ১১টা থেকে টানা কয়েক ঘণ্টা অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকের তলবি নোটিশের এক নম্বরে থাকা গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মাঈনুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুদকে হাজির হওয়ার আগেই রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তার গ্রেফতারের খবর নিশ্চিত করেছে দুদক।

দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য রাখা লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাটসহ মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দিলে বৃহস্পতিবার তিনজন দুদকে হাজির হয়ে তাদের বক্তব্য দেন।

মাঈনুল ইসলাম নামের আরেকজন ডিবির হাতে গ্রেফতার আছেন।’ গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা অভিযোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে গ্রামীণ টেলিকমের দুই আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ দুদকে হাজির হন। এরপর আসেন প্রতিষ্ঠানের এমডি নাজমুল ইসলাম। অনুসন্ধান টিমের সদস্যরা তাদের দীর্ঘ সময় জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছে গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ পাচার ও আত্মসাৎ সংক্রান্ত নানা তথ্য জানতে চাওয়া হয়।

গত ২২ আগস্ট গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল ইসলামসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে তলব করে চিঠি পাঠান অনুসন্ধান টিমের প্রধান। বৃহস্পতিবার তাদের দুদকে হাজির হওয়ার দিন ধার্য ছিল।

এর আগে গত ১ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি অনুসন্ধানে নথিপত্র চাওয়া হয়। ১৬ আগস্ট গ্রামীণ টেলিকমের এক কর্মকর্তা অনুসন্ধান টিমের কাছে ১১ ধরনের নথিপত্র জমা দেন।

অনুসন্ধানের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, শ্রমিক ও গ্রামীণ টেলিকম চুক্তি অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ ২০১০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত লভ্যাংশের মোট ৪৩৭ কোটি এক লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা নির্ধারিত হিসাবে জমা করে।

চুক্তি অনুযায়ী ওই অ্যাকাউন্ট থেকে পুরো টাকা গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রাপ্য হলেও ২৬ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকম এমপ্লয়ি ইউনিয়নের অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। ওই অ্যাকাউন্টের সিগনেটরির দায়িত্বপ্রাপ্ত গ্রামীণ টেলিকমের এমডি নাজমুল ইসলাম, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান।

অনুসন্ধানে দুদক কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, ওই ২৬ কোটি টাকার মধ্যে এক কোটি টাকা ইউসুফ আলীর আইনি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে গেছে। বাকি টাকা গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও আরেক নেতা মাঈনুল ইসলাম ভাগবাটোয়ারা করে নেন। তারা একেকজন তিন কোটি টাকা করে নিয়েছেন।

এ ছাড়াও ইউসুফ আলী নতুন করে ব্যাংক হিসাব খুলে আরও ৯ কোটি টাকা স্থানান্তর করে নেন। একই সঙ্গে ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান চৌধুরী যৌথ ব্যাংক হিসাব খুলে তাতে স্থানান্তর করেন ছয় কোটি টাকা। জাফরুল হাসান চৌধুরী কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্যানেল আইনজীবী।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক থেকে বের হওয়ার সময় গ্রামীণ টেলিকমের এমডি নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামীণ টেলিকম থেকে কোনো অর্থ আত্মসাৎ হয়নি। এটা ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া কিছুই নয়।’ আর আইনজীবী ইউসুফ আলী নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ আত্মসাতের যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা।’