eibela24.com
শুক্রবার, ২৬, এপ্রিল, ২০২৪
 

 
আমার জীবনের গল্প: যশোদা জীবন
আপডেট: ০৩:৪৯ pm ১৯-০৫-২০২০
 
 


আমি জানিনা ঠিক করলাম না বেঠিক করলাম। এটা ঠিক যে, বিবেকের তাড়নার হাত থেকে হয়তো রক্ষা পেলাম আমি। ইতিমধ্যে অনেক কিছু শিখে ফেললাম, বুঝতে চেষ্টা করলাম এই ভেবে যে, একটি পুর্নাঙ্গ বিল্ডিং বানাতে হলে একটি ইটের উপর আর একটি ইটের সমন্বয়ে নিয়মাবলী মেনে তৈরি করলে বিল্ডিং টি যেমন শক্ত হয় তেমনি জীবন গঠনেও একই নীতিমালা প্রযোজ্য। শর্টকাট ভাবে অর্থ কোন না কোন সময় অনর্থের কারণ হয়ে যায়। যেমনটি আমার বসের হয়েছিল, আমার ও হতে পারে যেকোনো সময়। এখনো অনেক জিনিস আমার অজানা। চিন্তা করতে করতে চলে আসলাম ঢাকায়। টিএসসিতে পরিচয় হলো, আলমগীর, সুমন, শাকিল, ডিউক, কাজল, শামীম, সানু আরো অনেকের সাথে। সন্ধ্যায় আলমগীরের সাথে গেলাম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে। পরিচয় হলো ডাক্তার রাসেল এর সাথে, রাতে রয়ে গেলাম হোস্টেলে। রাসেল একটা আড্ডা বাজ ছেলে, রাতে ওরা আড্ডা দেয়, তাস খেলে, নেশা করে, আড্ডায় যোগ দেয়, ডাক্তার আনসারী, ডাক্তার রেদোয়ান, ডাক্তার সুমন আরো অনেকে। ক্ষমতাসীন দলের সদস্য তাই ওর রুমে সবাই আসে। আমার কদরটাও বেড়ে গেলো কারন আমি টাকা পয়সা খরচ করি। এভাবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কে-৪৭ ব‍্যাচের সবার সাথে খাতির হয়ে গেলো। আমি এবং আলমগীর ওদের প্রিয় ব‍্যাক্তিতে পরিনত হলাম খুব অল্প সময়েই, আমি রয়ে গেলাম ফজলে হলে বেশ কিছুদিন। আন্তরিকতার সম্পর্ক হয়ে গেলো সবার সাথে। নগত টাকার গরমটাই আলাদা, দিন দিন হাত খরচ বেড়ে যাচ্ছে, বড় হচ্ছে বন্ধুদের তালিকা।

সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আসতাম আড্ডা দিতাম রাত ৯টা / ১০টা পযর্ন্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের গেটের পাসে একটি যাত্রী ছাউনি ছিলো, ওখান থেকে শামচুন নাহার হল পযর্ন্ত চায়ের দোকান বসতো। আমি আর আলমগীর নাম দিয়ে দিলাম আলম চত্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরের নামটা আমাদেরই দেওয়া। হাকিম ভাই দোকানের বসা যেতোনা, অনেকটাই বড় বড় ঘাসে ভরা ছিলো। কোন ছাত্ররা ঐ দিকে যেতো না। আলম চত্বরে আমাদের আড্ডা জমে উঠতো বিকালে, সবাই আসতো, সবাই বলতে- প্রশান্ত দা, শুভ্রা, কাজল দা দিলরুবা, হেনা, সুমন আরও অনেকে। ডাকসু কালচারাল রুমে মানে টিএসসি বিল্ডিং এর দোতলায় আড্ডা এবং কবিতার ঝড় উঠে যেতো, বাবুল কিন্ত ভালই কবিতা আবৃত্তি করতে পারতো। সাগরিকা ও ভালো নাটক করতে পারতো। সাগরিকা ওর কতো কথা। বরিশালের একটা ছেলের সাথে প্রেম করে। পড়াশুনায় সাগরিকার চেয়ে জুনিয়র। হ‍্যাপি, নারগীস, শিমু ওদের আড্ডাও কম ছিলো না। লাইব্রেরীর সামনে আড্ডায় জরিত হতো তোফায়েল, সুমন, শাকিল, ডিউক, আমি আর আলমগীর তো আছিই। মুজিব হলের সামনে আড্ডা দিতাম- আলিম, সেলিম রাজ্জাক ভাই, জুয়েল, অসিম আরো কতো জনের সাথে। মাহবুব ভাই আর আলিম একই রুমে থাকতো। মাহবুব তালুকদার ভাই নেতা, সাতক্ষীরা অঞ্চলের লোক, ক্ষমতাসীন দলের নেতা। দারুন বক্তব্য দিতে পারতো। মাহবুব ভাইয়ের কথা শুনতে ভালোই লাগতো। হাকিম চত্বরে বসে আড্ডা দিতাম ঘন্টার পর ঘন্টা জুয়েল, নয়ন, মোস্তফা, শরাফি, জয়ন্ত, আলিম, নারগীস, হ‍্যাপি, শিমু, বাবুল সহ আরো অনেকের সাথে। আমি চায়ের বিল দিতাম সাত/আট শো টাকার নিচে না। ফাকে আড্ডা দিতাম আমাদের নিতাই সেন, মাসুদ ভাই, জিয়া ভাই সাগর সহ অনেকের সাথে।টিএসসি উল্টো পাসে উদ‍্যানের সামনে বসে আড্ডা দিতাম কাজী এবাদ, তুহিন ভাই, সিরাজুল ভাই কাজল, রমেশ দা, মনি, তাপস দা আরো অনেকের সাথে, কি যে আড্ডা বলে বুঝানো যাবে না। মাঝে মাঝে মুজিব হলে থাকতাম আমি। জসিমউদ্দন হলে ৩১৪ নম্বরের কথা কিভাবে ভুলে যাবো। মাঝে মধ্যেই রুমে গাদাগাদি করে থাকতাম। চপল, ভালো নাম বরকতউল্লাহ, জুয়েল, সেলিম ওদের সাথে আড্ডা জমতো বেশ। বাবুল তো আবার রাজনীতি করে। অনেক ছেলে মেয়েদের দেখা শুনা করতে হয়। ওর বাড়ীর সবাই ওর ঐ রাজনীতি পছন্দ করে না ওর বাবাও না। ওর বাবা এলাকার মেম্বার। বাবুলের বাবা আমার সাথে অনেক আগেই আলাদা করে কথা বলেছিল। আমার আর্থিক অবস্থা যে খারাপ তা তিনি জানতেন। জানতেন বলেই বাবুলের বাবা প্রতিমাসে আমার কাছে ৩,০০০/- হাজার টাকা পাঠাতেন, বাবুলকে অর্ধেকটা দিতে আর বাকী অর্ধেকটা আমাকে নিতে আরো বলেছিলেন এই টাকার কথা আমি বাবুলকে যেনো না বলি। তাই প্রতিমাসে বা মাঝে মাঝে ওকে আমি ১৫০০/- টাকা করে দিতাম। বাবুল মনে করতো আমি ওকে ১৫০০/- টাকা এমনেই দিছি, আসলে সত্যি কথা এই যে ওর টাকাই আমি ওকে দিতাম আর এই কথাটা অদ‍্যবধি ও জানে না কারণ ওর বাবা আমাকে বলে দিয়েছিল বাবুলকে না জানাতে। যাহোক সব মিলিয়ে ভালো সময়ই যাচ্ছে, বন্ধুদের কাছে স্টুডেন্ট লাইফে চাকরির সুবিধার্থে আমার বেশ টাকা হয়েছিলো।

বন্ধুদের কাছে স্টুডেন্ট লাইফে লক্ষ্য লক্ষ‍্য টাকা অনেক বড় ব‍্যাপার আর যেটা আমার কাছে ছিলো। বন্ধুদের কখনও টাকা ধার হিসাবে দেই নাই যা দিয়েছি একেবারেই। এভাবে চলতে চলতে ইচ্ছা হলো ইন্ডিয়া বেড়াতে যাবো। আমার বড় বোন এদিকে সারা জীবনের জন‍্য ইন্ডিয়া চলে গেছে। আমার আর এক বন্ধু ফিরোজ আশরাফ বললো চলো যাই ইন্ডিয়া, রাজি হয়ে গেলাম। ফিরোজ আশরাফ অবশ‍্য একজন লেখক। লেখক হিসাবে খ‍্যাতি অর্জন করে ফেলেছে। "বেদনার নীল আকাশ" অন‍্যতম গল্পের বই যা বই মেলায় এক লক্ষ‍্যের মতো কাটতি হয়েছে। যাইহোক ওকে আমি অনুরোধ জানাচ্ছি আমাদের ইন্ডিয়া ১৯ দিনের ভ্রমণ কাহিনী লিখতে যা আমার জীবনের পরবর্তী গল্প হিসাবে ওর লেখা তুলে ধরবো। চলবে...

নি এম/