eibela24.com
শুক্রবার, ২৯, মার্চ, ২০২৪
 

 
আসন্ন দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় আমার মতামত: এ্যাড: উৎপল বিশ্বাস
আপডেট: ১১:১৫ pm ২৭-০৪-২০২০
 
 


বাংলাদেশে এক মাসের বেশী হলো লকডাউন বলবৎ আছে। সন্দেহ নেই এই সময়ে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং হবে। এর ফলে বাংলাদেশে একটা দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে অনেকে আশংকা প্রকাশ করেছেন।

সরকারের সামনে তাই দু'টো চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে - করোনা মহামারী মোকাবেলা এবং আসন্ন দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা। অনেকে হয়তো বলতে পারেন আগে করোনা মহামারী মোকাবলা করুক, তারপরে আসন্ন দুর্ভিক্ষ নিয়ে ভাবা যাবে। এটা হবে ঠিক করোনা বিষয়ে প্রথম দিকে সরকার যে উদাসীনতা দেখিয়েছিলেন, তার পুন:রাবৃত্তি।

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয় ৮ মার্চ। সাথে সাথে সরকার বিমান বন্দর থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সমস্ত ঢোকার মুখে যথাযথ পরীক্ষা করে লোকজনকে আইসোলেশন বা কোয়ারেনটাইনে পাঠালে আজকের পরিস্থিতি তৈরী হতো না। বাংলাদেশ থেকে ছোট রাষ্ট্র নেপাল ঠিক এ ভাবেই করোনা মহামারী মোকাবেলা করেছে। সরকারের তাই উচিৎ করোনা মহামারী মোকাবেলার সাথে সাথে আসন্ন দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহন করা।

নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদদের বরাত দিয়ে অনেকে বলছেন - দুর্ভিক্ষ কখনো খাদ্যাভাবের জন্য হয়নি, হয়েছে সুষম বন্টনের অভাবে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদদের এই বক্তব্য পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষ ( বাংলা ১৩৫০ বা ইংরেজি ১৯৪৩-৪৪) সহ অধিকাংশ দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে ঠিক হলেও, বিভিন্ন তথ্য ঘেটে দেখা যাচ্ছে বাংলায় ছিয়াত্তুরের মন্বন্তর ( বাংলা ১১৭৬ বা ইংরেজি ১৭৬৯-৭০) এবং উড়িষ্যার ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষ খাদ্যাভাবের কারণেই হয়েছিলো। সে কারণে কোনো বিখ্যাত লোকের অপ্তবাক্যের উপর ভরসা না রেখে সরকারের উচিৎ সব সম্ভাব্য উপায়গুলো কাজে লাগিয়ে আসন্ন দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করা।

এ ক্ষেত্রে সরকারকে কৃষি খাতের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। এই মুহুর্তে ক্ষেতে পাঁকা বোরো ধান আর আকাশে বৈশাখী মেঘ। এই ধান যাতে ক্ষেত থেকে কৃষকের ঘরে তোলা যায়, তার সব রকম সহযোগিতা দরকার। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উর্ধতন কৃষি কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যথেষ্ট পরিমানে ধান কাটা মেশিন তাদের হাতে নাই। সরকার প্রধানের উচিৎ এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নেওয়া।

বাংলার ছিয়াত্তুরের মন্বন্তর এবং উড়িষ্যায় ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষের মূল কারণ কৃষকরা কৃষি কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলো এবং খাদ্য শস্য প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম উৎপাদন হয়েছিলো। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাই সরকারকে কৃষকের মনোবল ধরে রাখার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। গত বছর "আমরা কৃষক সন্তান" ব্যানারে কিছু কাজ করেছিলাম। আমাদের সেই অভিজ্ঞতা বলছে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না। এবারও যদি একই ঘটনা ঘটে, তবে তারফলে কৃষক কৃষি কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। আর সে জন্যে সরকারকে কৃষকের উৎপাদিত পন্য ন্যায্য মূল্যে কিনতে হবে।

আরো বিশেষ বিশেষ কারণে কৃষি খাতে বাড়তি নজর দেবার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। করোনা মহামারীর ফলে আগের মতো খাদ্য ঘাটতি পরনের জন্য বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানীর প্রক্রিয়া সংকুচিত হয়ে গেছে। প্রতিটি দেশকে একই ভাবে খাদ্য ঘাটতি এবং অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলা করতে হবে। অন্যদিকে দেশীয় পরিস্থতিতে আগে গ্রামে কাজ না থাকলে মানুষ শহরে এসে রিক্সা চালক থেকে শুরু করে গার্মেন্টস শ্রমিক হিসাবে জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে। করোনা মহামারী শহরের এই সবাই কর্ম সংস্থানের উপর আঘাত হেনেছে এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কাজ হারাবে। এদের বিকল্প কর্ম সংস্থান হতে পারে কৃষি কাজ। আর তার জন্য দরকার সরকারী প্রণোদনা। সরকার সহজ শর্তে কৃষি ঋণ বিতরন করলে খাদ্য শস্য, পোল্ট্রি ফার্ম, মাছের চাষ, সব্জি চাষ, গরু-ছাগলের খামার সহ নানা উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য পেতে পারে - যা আসন্ন দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় যথেষ্ট কার্যকরি ভূমিকা রাখবে।

বিভিন্ন অঞ্চলে ছাত্র সমাজ, যুব সমাজ এবং স্থানীয় শোভাকাঙ্খীদের কাজে লাগানো দরকার বলে মনে করি। তাদের নেতৃত্বে আরো কত কার্যকর ভাবে সংকট মোকাবেলা করা যায় সরকারের এ বিষয়ে ভাবা উচিৎ। সর্বোপরি দেশের সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনায় সব সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদদের প্রস্তাবিত সুষম বন্টন আসন্ন দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকের উৎপাদিত পন্য যাতে ঠিক মতো বাজারজাত করা যায় তার দিকে নজর রাখা হবে সরকারের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব।

নি এম/