রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪
রবিবার, ২৪শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সর্বশেষ
 
 
রাষ্ট্রের - দায়িত্ব ও ধর্মব্যবসায়ীদের কাছে প্রশ্ন
প্রকাশ: ০১:৫৮ am ১৭-১০-২০২১ হালনাগাদ: ০১:৫৮ am ১৭-১০-২০২১
 
 
 


যদি একবারে বলি তাহলে বলতে হয়, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে সংবিধান থেকে বৈষম্যমূলক ধারা বিলোপ করতে হবে।

সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারিকুলামে বাংলাদেশের সংবিধান পাঠ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরমত সহিষ্ণুতা-ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে পাঠ দান এবং কাউন্সেলিং জোরদার করতে হবে।’ 
কথাগুলো কেন এভাবে বললাম এবার সেই কথায় আসি। আমার প্রশ্ন, রাষ্ট্রের কি কোন ধর্ম আছ ? রাষ্ট্র  কি অজু করে ? গোসল করে ? নামাজ পড়ে ? যাকাত দেয়? হজ্ব করে? রোজা রাখে? বিবাহ করে ? জেহাদ করে? রাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে কি মহান আল্লাহ কোন  কুরআনের বিধান নাযিল করেছেন?  কুরআন কি ব্যক্তি-মানুষের উদ্দেশ্যে নাজিল হয়নি? রাষ্ট্র কি কোন একক ধর্মের রাষ্ট্র ? সকল ধর্মের নাগরিকদের রক্ত দিয়ে  কি ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্র গঠিত হয়নি? তাহলে কোন যুক্তিতে সংবিধানে শুধু ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়েছে ? কেউ কেউ বলছেন,  সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের বাংলাদেশে ইসলাম তো রাষ্ট্রধর্ম থাকতেই পারে। 
যারা এটা বলেন তাদের এ অযৌক্তিক দাবির বিষয়ে পবিত্র কুরআনের সূরা আন- আমের ১১৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ নির্দেশ প্রদান করে বলেছেন, “যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথা মত চল তবে তাহারা তোমাকে আল্লাহর পথ হইতে বিচ্যুত করিবে। তাহারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে ; আর তাহারা শুধু অনুমান ভিত্তিক কথা বলে।”
এই আয়াতে আল্লাহর বিধানে সুস্পষ্ট করা হয়েছে, সত্য এবং ন্যায়ের মাপকাঠিতে অধিকাংশ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতকে প্রাধান্য দেয়ার কোনো বিধান আল্লাহ তায়ালা দেননি।
বরং আল্লাহ তাআলা ন্যায়-পরায়নতার  উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার নির্দেশ দিয়ে সূরা মাযেদার ৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন, “হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকিবে; কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদিগকে যেন কখনো সুবিচার বর্জনে  প্ররোচিত না করে , সুবিচার করিবে,  ইহা তাকওয়ার  নিকটতর  এবং আল্লাহকে ভয় করিবে, তোমরা যাহা কর নিশ্চই আল্লাহ তাহার  সম্যক খবর রাখেন।" 
এই আয়াতেও মহান আল্লাহ তায়ালা যে কোন সম্প্রদায়ের প্রতি রাষ্ট্রকর্তৃক, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ কর্তৃক  নিপীড়ন এবং অবিচার না করতে কঠোর নির্দেশ প্রদান করেছেন। মহানবী  হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি মদীনাকে কোন রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিলেন? করে থাকলে সে রাষ্ট্রের নাম কি ? এবং তার দলিল কোথায় আছে ? মহানবী সা: কি  মদিনাকে  ইসলামী রাস্ট্র ঘোষণা করেছিলেন ?  না তিনি ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছিলেন ? 
করে থাকলে তার দলিল কি ? প্রমাণ কি তা পবিত্র কুরআনের আয়াত থেকে এর দাবিদারদের উপস্থাপন করার চ্যালেঞ্জ রইল। মূলত নবী-রাসূলগণ পৃথিবীতে রাষ্ট্রপতি / প্রধানমন্ত্রী হতে আসেননি , কারণ নবী-রাসূলগণের ক্ষমতা চিরস্থায়ী। 
আর প্রধানমন্ত্রী/ রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, তাদের ক্ষমতা  ক্ষণস্থায়ী, কখনো কখনো তারা পরাজিত হন, বিতাড়িত হন, ক্ষমতাচ্যুত হন , কারারুদ্ধ হন, কেউ কেউ রেললাইন দিয়ে দৌড়ান! আবার কেউ কেউ ভিন্ন রাষ্ট্রে পালিয়ে বেড়ান!
সুতরাং নবী-রাসূলগণ পৃথিবীতে আসেন আল্লাহর সঙ্গে বান্দাদের সম্পর্ক  স্থাপন করতে  এবং সারা পৃথিবীতে বার্তাবাহক, সতর্ককারী হিসেবে  আসেন। বলাই বাহুল্য ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার জন্যই কতিপয় রাজনীতিবিদেরা এবং সামরিক স্বৈরাচার ও ধর্মব্যবসায়ীরা ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম এবং  সকল ধর্মের মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত,   
সকল ধর্মের নাগরিকদের পঠিত  সংবিধানে ইসলামের  একটি বাণী বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম যুক্ত করে   ৭২' সালে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় তৈরি করা সংবিধান কাটছাঁট করে   মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গঠিত অসাম্প্রদায়িক চেতনার ঐক্যের প্রতীক সেই সংবিধানকেই অপরাজনীতির  হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন । 
আজ যারা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম  নিয়ে রাজনীতি করছেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন  ধর্মনিরপেক্ষ ভারত সরকার  যদি তাদের হিন্দু ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম এবং ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষণা করেন আপনারা কি তা সমর্থন করবেন ? 
আমেরিকা, কানাডা, লন্ডন , জার্মানি  ফ্রান্স , ইটালি , অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান কোরিয়াসহ ইউরোপের দেশগুলো যদি তাদের দেশের খ্রিস্টান ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্ম এবং খ্যিস্টান রাষ্ট্র  ঘোষণা করেন আপনারা কি সেটা মেনে নিবেন? 
এসকল দেশে বসবাসকারী লক্ষ-কোটি মুসলমানরা তখন  কি তৃতীয় শ্রেনীর নাগরিক হয়ে যাবেন না? ভালো করে ভেবে দেখুন ? চিন্তা করে কথা বলুন এবং  উপরে উল্লেখিত পবিত্র কুরআনের দু'টি আয়াতের  বিধান ও শিক্ষা থেকে উত্তর দিন।  
আন্তর্জাতিক ইসলামী চিন্তাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করেন এবং আমিও মনে করি রাষ্ট্রের ধর্ম হওয়া উচিত “ধর্মনিরপেক্ষতা" তাহলেই সকল ধর্মের নাগরিকদের সাংবিধানিক সমান অধিকার, সম নাগরিক অধিকার, সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত থাকবে। এটিই রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি এবং  রাষ্ট্রের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক ।
নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আসা অর্ধ শতাব্দীর "বাংলাদেশ " নামক রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সকল ধর্মের নাগরিকদের  ঐক্যবদ্ধ রাখার একমাত্র চাবিকাঠি পরমত সহিষ্ণু  ধর্ম নিরপেক্ষ নীতি -আদর্শ  রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিকভাবে ব্যাপকভাবে চর্চা করা। 
৭১'-এ ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার একমাত্র  গ্যারান্টি পরমত সহিষ্ণুতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় নতুন প্রজন্মকে ভবিষ্যৎ জাতীয় নেতৃত্বের জন্য তৈরি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির  বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সরকার এবং রাজনৈতিক, সামাজিক, নাগরিক সংগঠন গুলোর এগিয়ে  আসার কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং সাধু সাবধান! 

 
 
 
   
  Print  
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
আরও খবর

 
 
 

 

Editor & Publisher : Sukriti Mondal.

E-mail: eibelanews2022@gmail.com

a concern of Eibela Ltd.

Request Mobile Site

Copyright © 2024 Eibela.Com
Developed by: coder71