প্রতি দুটি বা তিন বছরে অন্তর একটি করে অতিরিক্ত মাস আসে, যাকে আমরা বলে থাকি অধিক মাস বা মল মাস। এই মল মাসে কোনো শুভ কাজ করা হয় না। এই মল মাস টিকে আমরা পুরুষোত্তম মাস হিসেবে ও জানি। হিন্দু ধর্মে এই মল মাসে আলাদা একটি তাৎপর্য আছে।
পুরান মতে বিশ্বাস করা হয় যে, অধিক মাস অথবা মল মাসে পুজাপাঠ অথবা দান করলে তা অন্যান্য মাসের তুলনায় ১০ গুণ বেশি ফল দেয়। প্রতি তিন বছরে আসা এই মল মাস সম্পর্কে অনেক পৌরাণিক কাহিনী আছে। আসুন আজ আমরা জেনে নেব এই মলমাস সম্পর্কে কিছু কথা।
হিরণ্যকশিপু অমরত্তের বরদান চেয়ে ছিলেন:
কথিত আছে, অসুর রাজ হিরণ্যকশিপু অমর হবার জন্য বহুদিন ধরে কঠোর তপস্যা করেছিলেন। কঠিন তপস্যার পর ব্রম্ভা সন্তুষ্ট হয়ে তার সামনে প্রকট হয়েছিলেন। ব্রম্ভা যখন তাকে বর দেবার কথা বললেন তখন হিরণ্যকশিপু বলেন যে, আপনার সৃষ্ট কোন প্রাণী, মানুষ এমনকি দানব দেবতার দ্বারা আমার যেন কখনো মৃত্যু না হয়। দিন অথবা রাত, অস্ত্রশস্ত্র, আকাশ পাতাল, আপনার সৃষ্ট বারো মাস, কখনোই যেন আমার মৃত্যু না হয়। কেউ যেন যুদ্ধে আমার সঙ্গে জিততে না পারে। এই কথা শুনে ব্রহ্মা তাঁকে আশীর্বাদ দিয়ে বলেন তথাস্তু।
হিরণ্যকশিপুর মৃত্যু:
ব্রম্ভার বর দানের পর হিরণ্যকশিপুর অত্যাচার দিনে দিনে বাড়তে থাকে সকলের উপর। তিনি কখনোই চাইতেন না যে ভগবান বিষ্ণুর কোন ভক্ত পৃথিবীতে বেঁচে থাকুক। তিনি শুধুমাত্র চাইতেন যে চারিদিকে শুধু মাত্র তার পুজো করা হোক। কিন্তু ভাগ্যের এমনই বিধান যে তার নিজের পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন সবথেকে বড় বিষ্ণুভক্ত। তাই প্রহ্লাদকে হত্যা করার জন্য হিরণ্যকশিপু অনেক রকম চেষ্টা করতে শুরু করলেন। এদিকে ভগবান বিষ্ণু তার পরম ভক্ত কে বাঁচানোর জন্য সর্ব প্রথমে ১২ মাসে ১৩ মাসে পরিবর্তন করে একটি অধিক মাসে সৃষ্টি করলেন।
যেহেতু হিরণ্যকশিপু ব্রহ্মা থেকে বর চেয়ে ছিলেন যে ১২ মাসের র কোন মাসে তাকে মারা যাবে না। তাই প্রথমে একটি অধিক মাস সৃষ্টি করে ভগবান বিষ্ণুর নরসিংহ অবতার নিয়ে সন্ধ্যার সময় অর্থাৎ না দিন না রাত, এমন একটি সময়ে নিজের উরুর উপর রেখে নিজের নখ দিয়ে হত্যা করেছিলেন হিরণ্যকশিপু কে।
ভগবান বিষ্ণু নিজের অধিক মাসের দায়িত্ব নেন: চন্দ্র বছরের প্রতিটি মাসের জন্য একজন করে দেবতা নির্ধারিত রয়েছে।কিন্তু এই একটি মাস যোগ হবার ফলে এই মাসের জন্য কোন দেবতা নির্ধারিত ছিল না। কথিত আছে যে, এই পরিস্থিতিতে সমস্ত ঋষি মুনি ভগবান বিষ্ণু কে এই মাসের ভার নেবার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। যেহেতু এই মাসের স্রষ্টা ছিলেন ভগবান বিষ্ণু, তাই তিনি সকলের অনুরোধ গ্রহণ করলেন এবং তারপর থেকে মলমাস পুরুষোত্তম মাস হয়ে ওঠে।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com