রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪
রবিবার, ২৪শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সর্বশেষ
 
 
ভগবান কেন দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণে বাধা দিলেন না ?
প্রকাশ: ১২:৪৮ pm ০১-০৫-২০২০ হালনাগাদ: ১২:৪৮ pm ০১-০৫-২০২০
 
এইবেলা ডেস্ক
 
 
 
 


ভগবান শ্রী কৃষ্ণের সারথি ছিলেন উদ্ভব। শ্রীকৃষ্ণ যখন স্বর্গে ফিরে যেতে মনস্থ করলেন তখন তিনি তাঁর সমস্ত ভক্তের মনোকামনা পূর্ণ করছেন। কিন্তু শুধু উদ্ভব ছিলেন নীরব আসক্তিহীন। উদ্ভব কিছু চাইছে না দেখে ভগবান তাকে কিছু চাইতে বললেন। উদ্ভব বলল প্রভু আমি তো আপনার কাছ থেকে কোনদিন কিছু চাইনি তবে আজ কেন চাইব? ভগবান বললেন উদ্ভব আজ তুমি না চাইলেও আমি তোমাকে কিছু দেব। না দিলে অবিচার হবে। উদ্ভব বলল বেশ তো যদি কিছু দিতেই চান তবে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন।"কি প্রশ্ন বল উদ্ভব। আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর অবশ্য দেব"। উদ্ভব বলল "প্রভু আপনি তো পাণ্ডবদের পরম মিত্র ছিলেন তবুও তাদের সবথেকে বড় বিপদে আপনি তাদের পাশে কেন থাকেন নি? আপনি তো দীনবন্ধু।

আপনার পরম মিত্রদের পাশে দাঁড়ালে হয়তো কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধ আপনি আটকে দিতে পারতেন। মহারাজ যুধিষ্ঠির যখন পাশা খেলায় হেরে যাচ্ছিলেন তখন আপনি কেন যাননি তাঁকে সাহায্য করতে? আপনি কেন দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণে বাধা দিলেন না?" এই প্রশ্ন শুনে ভগবান বললেন "উদ্ভব আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দেব তবে তার আগে তোমাকে জানতে হবে ভক্ত, ভগবান ও বন্ধুত্ব পালনের কিছু নিয়ম। যখন কোন ভক্ত আমাকে বন্ধু বলে ভাবে তখন সে মনে করে আমি তার সাথে সর্বদা থাকি। তখন সেই ভক্ত তার সব কাজের সাক্ষী মানে আমাকে। আমাকে সাক্ষী করলে কখন কোন ভক্ত কোন খারাপ কর্ম করতেই পারে না। কারণ আমি তার সাথে সর্বদা থেকে তাকে কুকর্ম থেকে বিরত রাখি। কিন্তু যখন সেই ভক্ত আমার ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে অহংকারের ফলে আমার সঙ্গ ত্যাগ করে তখন আমি নিরুপায় হয়ে যাই। আমার থেকে দুরত্ব বাড়লেই তখন সে পাপ করতে শুরু করে। অহংকারের প্রাচীর তুলে সে তখন আমাকে আড়াল করে রাখে। অসহায়ের মত দেখা ছাড়া আমার কিছুই করার থাকে না। কারণ মানুষের কর্মের ওপর ভগবানের কোন অধিকার নেই। এটাই জগতের নিয়ম। মানুষ স্বাধীন জীব। শুধু মানুষ কেন জগতের সমস্ত জীবই স্বাধীন। মানুষ তো আরও স্বতন্ত্র। তার বিবেক, বুদ্ধি, মনুষ্যত্ব আছে। তাই তার স্বাধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ ভগবান ও করতে পারেন না। মোহ, মায়া ও অহংকারের বশীভূত হয়ে বাসনাসক্ত মানুষ পাপের বোঝা বাড়িয়ে চলে। এবার তোমার প্রশ্নের উত্তর দেব উদ্ভব। যুধিষ্ঠির যখন পাশা খেলার জন্য শকুনির আমন্ত্রন গ্রহণ করলো তখন সে আমাকে জানায় নি। কারণ সে জানতো পাশা খেলায় আমি বাধা দেব। যখন আমি জানতে পারলাম সেই কথা তখন সে আমাকে দিব্য দিয়ে আমাকে অসহায় করে দিল। যুধিষ্ঠির অহংকার অতি আত্মবিশ্বাসের দ্বারা চালিত হয়ে পাশা খেলতে গেল। যুধিষ্ঠির আমাকে দ্যূত ক্রীড়াস্থলে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছিল। ভাব তো উদ্ভব যদি শকূনির সাথে আমি পাশা খেলতাম তাহলে খেলার পরিণাম কি হতো? পঞ্চ পাণ্ড বাকি সব কিছু হারিয়ে নিলামে উঠতো? দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ কি হতো? দুঃশাসন যখন দ্রৌপদীর কক্ষে গিয়ে তাকে অপমান করতে লাগল, তার কেশ আকর্ষ ণ করে তাকে সভাকক্ষে টেনে নিয়ে এল তখনও দ্রৌপদী আমাকে ডাকেনি। আমার কথা তখন তার মনেই ছিল না। যখন শেষ মুহূর্তে সম্মান রক্ষার জন্য এক ফালি বস্ত্র অংগে ছিল না তখন সে আমাকে স্মরণ করলো। আমার প্রিয় সখী আমাকে স্মরণ করছে এক্কেবারে শেষ মুহূর্তে। ডাকা মাত্রই আমি দ্রৌপদীর কাছে গিয়ে তার সম্মান রক্ষা করেছি। অর্জুন, ভীম, নকুল, সহদেব যখন তারা সবাই দুর্যোধনের কাছে নিলাম হয়ে যাচ্ছিল তখন তারা কেউ আমাকে সাহায্যের জন্য ডাকেনি। দ্রৌপদীর স্মরণ মাত্রই আমি দীনবন্ধুর মত সূক্ষ্ম শরীরে হাজির হয়ে তাকে সাহায্য করেছিলাম উদ্ভব। তাহলে এবার বল আমার দোষ কোথায়?" উদ্ভব বলল "আমি বুঝেছি প্রভু আপনার বিস্মরণ মানে হল আমার মরণ। তাই প্রভু আপনি আমাকে আশীর্বাদ করুন আমি যেন এক মুহূর্ত আপনাকে না ভুলে যাই।" ভগবান আশীর্বাদ করে বললেন "তথাস্তু"।

নি এম/

 
 
 
   
  Print  
 
 
 
 
 
 
 
 
আরও খবর

 
 
 

 

Editor & Publisher : Sukriti Mondal.

E-mail: eibelanews2022@gmail.com

a concern of Eibela Ltd.

Request Mobile Site

Copyright © 2024 Eibela.Com
Developed by: coder71