রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রবিবার, ২৭শে মাঘ ১৪৩১
সর্বশেষ
 
 
বোমার ‘মাস্টার’ নব্য জেএমবির ২৪ জন!
প্রকাশ: ০৫:১৭ pm ০২-০৮-২০২১ হালনাগাদ: ০৫:২০ pm ০২-০৮-২০২১
 
এইবেলা ডেস্ক
 
 
 
 


সিটিটিসি কর্মকর্তাদের ভাষ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর তথ্য মিলেছে, যারা নব্য জেএমবির সদস্যদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজনকে (জাহিদ হাসান ওরফে ফোরকান) শনাক্ত করা গেলেও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। বাকিদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি।

‘তরবারির যুগ শেষ। এখন লড়াই হবে গোলাবারুদে। কাজেই হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, তাই দিয়ে বোমা বানাও। এ ক্ষেত্রে রান্নাঘরকে ব্যবহার করো।’

নব্য জেএমবির বোমা তৈরিতে পারদর্শী নেতারা নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠনটির সক্রিয় সদস্যদের অনলাইনে বোমা তৈরিতে এমন নির্দেশনা দিচ্ছেন, যাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জঙ্গি কর্মকাণ্ড অনুসরণকারী পুলিশ কর্মকর্তারা নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, নব্য জেএমবির পাঁচ-ছয়জন নেতা রয়েছেন, যারা বোমা তৈরির প্রশিক্ষক। এই জঙ্গি নেতারা অনলাইনে বিভিন্ন সেল (চারজন) করে বোমা তৈরির নির্দেশনা দেন সক্রিয় সদস্যদের। গত এপ্রিল থেকে তিন মাসেই অন্তত ২৪ জন সক্রিয় সদস্যকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, যারা এখন খুব সহজেই বোমা বানাতে পারেন। তারাসহ সব প্রশিক্ষককে শনাক্তের পাশাপাশি গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপকমিশনার (ডিসি) আবদুল মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নব্য জেএমবির যারা বম্ব-টেক ব্যবহার করে বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে সক্রিয় সদস্যদের বোমা তৈরির ধারণা দিচ্ছেন, আমরা তাদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছি।’

বোমার ‘মাস্টার’ নব্য জেএমবির ২৪ জন!

সাব্বির আহম্মেদ। ছবি: সংগৃহীত

 

সিটিটিসির একাধিক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, গত ১৭ মে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডসংলগ্ন পুলিশ বক্সে বোমা ফেলে রাখে জঙ্গিরা। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে নব্য জেএমবির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পান তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তদন্তকালে ৭ জুলাই রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে বামছি ব্যারেক ওরফে মেজর বামছি ওরফে আবু হাফস আল বাঙ্গালি ওরফে জন ডেভিড এবং নাঈম মিয়া ও রবিউল ইসলাম ওরফে উসমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১১ জুলাই যাত্রাবাড়ী থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে ডেভিড কিলার ও কেরানীগঞ্জ থেকে কাউসার হোসেন ওরফে মেজর ওসামাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে জামালপুর ও নারায়ণগঞ্জের তিনটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ও আইইডি তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রীয়করণ দলের কর্মকর্তারা জানান, জুলাই মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নব্য জেএমবির যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, তারা সবাই বোমা বানাতে পারেন। এদের মধ্যে সাব্বির আহম্মেদ আইইডি তৈরির অন্যতম কারিগর। দীর্ঘদিন ধরে নব্য জেএমবির ময়মনসিংহ অঞ্চলের সামরিক শাখার কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার অধীনেই ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল ও কুড়িগ্রামে অন্তত ২০ জন সক্রিয় সামরিক সদস্য রয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

কর্মকর্তারা জানান, নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান ছিলেন সংগঠনটির বোমা তৈরির মূল কারিগর। তিনি এখন কারাবন্দি। তবে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল সাব্বির আহম্মেদের। গত ৭ জুলাই গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই জঙ্গি নেতার পরিবারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল তার।

বোমার ‘মাস্টার’ নব্য জেএমবির ২৪ জন!

নব্য জেএমবির দুই সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে ডেভিড কিলার (বাঁয়ে) ও কাওসার হোসেন ওরফে মেজর ওসামা। ছবি: সংগৃহীত

 

সংগঠনটির সদস্যদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ যারা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে কেউ একজন রয়েছেন, যিনি রসায়নবিদ- এমন ধারণা থেকে তদন্তে নামে সিটিটিসি। দীর্ঘ তদন্তের পর জাহিদ হাসান ওরফে ফোরকানসহ একাধিক ব্যক্তিকে শনাক্ত করে সিটিটিসি, যারা সংগঠনটির সদস্যদের অনলাইনে ও অফলাইনে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন।

সিটিটিসি কর্মকর্তাদের ভাষ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর তথ্য মিলেছে, যারা নব্য জেএমবির সদস্যদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজনকে (জাহিদ হাসান ওরফে ফোরকান) শনাক্ত করা গেলেও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। বাকিদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি।

সিটিটিসি কর্মকর্তারা জানান, জাহিদ হাসান ওরফে ফোরকান আত্মগোপনে রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, কোথাও ‘হিযরতে’ গেছেন তিনি। জঙ্গি কর্মকাণ্ডে তার জড়িত থাকার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলায় জড়িত শরিফুল ইসলাম রিপনের কাছ থেকেই তার বিষয়ে প্রথম তথ্য পাওয়া যায়। তারপর থেকেই তাকে খোঁজা হচ্ছে।

সিটিটিসি অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. রহমত উল্যাহ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নব্য জেএমবির বোমা তৈরির প্রধান কারিগর জাহিদ হাসান ওরফে ফোরকান ভাই ওরফে ইসমাইল ভাইকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাকে আমরা ২০১৪ সাল থেকে খুঁজছি। ওই সময়েই আমাদের ধারণা ছিল, আইইডি বানানোর পেছনে একজন কেমিস্ট্রির ছাত্র থাকতে পারেন, যার বিষয়ে জঙ্গি নেতা শরিফুল ইসলাম রিপনের কাছ থেকেই প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায়। এরপর থেকেই তাকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া নব্য জেএমবির নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, সংগঠনটির অনেক বোমা কারিগর সক্রিয় সদস্যদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বোমার ‘মাস্টার’ নব্য জেএমবির ২৪ জন!

নাঈম ও রবিউল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

নব্য জেএমবিতে কতজন বোমা তৈরির প্রশিক্ষক আছেন এবং এ পর্যন্ত তারা কতজনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানতে পারেনি নিউজবাংলা।

সিটিটিসি কর্মকর্তারা জানান, কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা ঘিরে তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি অনলাইনে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন জাহিদ হাসান ওরফে ফোরকান। তার বেশ কয়েকটি কুনিয়া বা সাংকেতিক নাম রয়েছে। সেসব নাম ব্যবহার করে অনলাইনে বোমা তৈরির একাধিক সেল গঠন করেছেন তিনি। জাহিদ হাসান ওরফে ফোরকানসহ চার-পাঁচজন জঙ্গি নেতা পরিচালিত পাঁচ-ছয়টি সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের মাধ্যমে গত তিন মাসে ২০-২৪ জনকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে জানান, রসায়ন বিভাগের ছাত্র জাহিদ হাসান অনেক দিন ধরেই নিখোঁজ। সম্প্রতি তার পরিবারের সদস্যরা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণও করেন।

জাহিদের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটায়। সেখানকার রায়হানপুরে সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেন তিনি। পরে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। তবে স্নাতক শেষে আর ভর্তি হননি তিনি। সূএ: নিউজ বাংলা

নি এম/

 
 
 
   
  Print  
 
 
 
 
 
 
 
 
আরও খবর

 
 
 

 

Editor & Publisher : Sukriti Mondal.

E-mail: eibelanews2022@gmail.com

a concern of Eibela Ltd.

Request Mobile Site

Copyright © 2025 Eibela.Com
Developed by: coder71