এতদিন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে শিক্ষা-সংস্কৃতি-কলাক্ষেত্রের নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আজ দুপুরে উপমহাদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রের এক ঐতিহাসিক বৈঠকের সাক্ষী থাকছে কবিগুরুর কর্মক্ষেত্র বিশ্বভারতী।
বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের পর সেখানেই মুখোমুখি বৈঠকে বসেছেন শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি। নির্বাচনী বছর হওয়ায় বাংলাদেশের জনগণের কাছে দুই নেতার এ বৈঠক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে ভারতের, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের জনগণের কাছেও এ বৈঠক যথেষ্ট আগ্রহ জাগিয়ে রাখছে- কারণ এক বছর পরেই ভারতের জাতীয় নির্বাচন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও সীমান্তে জঙ্গি অনুপ্রবেশের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে কি না বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও আলোচনার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চীন থেকে বাংলাদেশের সাবমেরিন ক্রয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার ক্রয়, বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা জোরদারের প্রেক্ষাপটেও হাসিনা-মোদির এ বৈঠকের প্রতি ভারতের বিশেষ আগ্রহ থাকবে।
বস্তুত এ কারণে হাসিনা-মোদি বৈঠকে কী কী আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়, তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে চীন-মিয়ানমারের মতো প্রতিবেশী থেকে শুরু করে সব আন্তর্জাতিক মহল।
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদনের জন্য ভারতকে চাপ দিয়ে আসছে। কিন্তু বাধা হয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গকে ডিঙিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও তিস্তার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। এবারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গেও শেখ হাসিনার বৈঠকের কথা রয়েছে। এখন মোদি-হাসিনা, হাসিনা-মমতা বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো সংবাদ আসে কি না সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে সবাই।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে ভারতের সহযোগিতা আদায়ের বিষয়টি তো বটেই পাশাপাশি তিস্তা চুক্তির আশ্বাস আদায়ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার সমপরিমাণ পানির দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ২০১১ সালে তিস্তা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি অনুযায়ী ভারত তিস্তার ৪২.৫ শতাংশ পানি এবং বাকি ৩৭.৫ শতাশ বাংলাদেশের পাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার আপত্তিতে ঝুলে রয়েছে চুক্তির ভবিষ্যৎ। উপরন্তু তিস্তার পরিবর্তে তোর্সার জল ভাগ করার প্রস্তাব দিয়েছেন মমতা।
কিন্তু নির্বাচনী বছরে শেখ হাসিনা সরকারের কাছে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করা এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অনেকে। কারণ তিস্তার জল নিয়ে কোনো ধরনের সমাধানে পৌঁছাতে না পারলে শেখ হাসিনার সরকার বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়বে। আগামী নির্বাচনে এর প্রভাবও পড়তে পারে। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, তিস্তা চুক্তি সম্পাদন করতে না পারলে তাদের দল অস্বস্তিতে পড়বে। গত এপ্রিলে ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছেও এই কথা বলে এসেছেন তিনি।
নি এম/
![]() |
সম্পাদক : সুকৃতি কুমার মন্ডল খবর প্রেরণ করুন # info.eibela@gmail.com ফোন : +8801517-29 00 02 +8801711-98 15 52 a concern of Eibela Foundation |
|