সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের উচিত একে অন্যকে সম্পূর্ণভাবে ট্রানজিটের (সংযোগ) অধিকার দেওয়া।’
নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, কোভিড–পরবর্তী পরিস্থিতি ট্রানজিট বা সংযোগ, অর্থাৎ এক দেশের মধ্য দিয়ে অন্য দেশে যাওয়া-আসা ও বাণিজ্যের নিরবচ্ছিন্ন অধিকারের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে এনেছে। কোভিড ও ইউক্রেন পরিস্থিতি পৃথিবীতে শক্তি ও খাদ্যের অভূতপূর্ব সংকট সৃষ্টি করেছে। এ থেকে বাঁচতে সরবরাহ ঠিক থাকা জরুরি। সে জন্য প্রয়োজন একে অন্যকে ট্রানজিটের অধিকার দেওয়া।
চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান ছাড়াও মধ্য এশিয়ার চার দেশ—কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান এসসিওর সদস্য। আজ শুক্রবার শীর্ষ সম্মেলনের আসরে অন্যান্য দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সামনেই প্রধানমন্ত্রী মোদি ট্রানজিটের এই দাবি জানালেন, যেহেতু পাকিস্তান সেই অধিকার ভারতকে দেয়নি।
আগামী বছর এসসিওর সভাপতিত্ব করবে ভারত। শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সেই বিষয়ে ভারতকে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ২০২৩ সালে শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজনে ভারতকে চীন সর্বোচ্চ সাহায্য করবে।
উজবেকিস্তানের ঐতিহাসিক শহর সমরখন্দে আয়োজিত এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের শুরুতে গ্রুপ ছবি তোলার সময় প্রেসিডেন্ট সি ও প্রধানমন্ত্রী মোদি পাশাপাশি দাঁড়িয়েছিলেন। ২০২০ সালের জুন মাসে পূর্ব লাদাখের গলওয়ান এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেঁধেছিল, তারপর দুই নেতা এই প্রথম মুখোমুখি হলেন। এই সম্মেলনের ঠিক আগেই লাদাখের গোগরা হট স্প্রিং অঞ্চল থেকে দুই দেশের সেনাবাহিনী সংঘর্ষ–পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরে যেতে সম্মত হয়। গত সোমবার সেই পশ্চাদপসরণ পর্ব শেষ হয়েছে।
সম্মেলনের কোনো এক ফাঁকে সির সঙ্গে মোদির বৈঠক হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনার অন্ত ছিল না। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। শুধু সি নন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে আগাম কিছু বলা হয়নি। যদিও মোদি-পুতিন বৈঠক হচ্ছে। ইউক্রেন আক্রমণের পর পুতিনের সঙ্গেও এই প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ হলো মোদির।
রাশিয়া থেকে ভারত সস্তায় জ্বালানি কিনছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে জ্বালানিসংকট যে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, মোদি তাঁর ভাষণে সেটা উল্লেখও করেছেন। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে সেই সংকটের অবসানে মোদির অবশ্যই আলোচনা হবে বলে সরকারি সূত্রের বিশ্বাস। এই অবসরে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকভ মিরজিয়োইয়েভ ও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়।
সম্মেলনে হিন্দিতে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রথমেই জোর দেন চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এসসিওর সদস্যদেশগুলোর ভূমিকার ওপর। তিনি বলেন, এই দেশগুলোতে পৃথিবীর ৪০ শতাংশ মানুষের বসবাস। তাই খাদ্য, জ্বালানিসহ অন্যান্য সরবরাহে পারস্পরিক সংযোগ রক্ষা ও তার অধিকার পাওয়া খুবই জরুরি। কোভিড ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ সরবরাহব্যবস্থাকে বিরাট ধাক্কা দিয়েছে।
কোভিড পরিস্থিতি যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছিল, ভারত তা কাটিয়ে উঠছে জানিয়ে মোদি বলেন, আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার চলতি বছরে সাড়ে ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। ভারতের অর্থনীতির গতি সবচেয়ে বেশি। মোদির সুরে সুর মিলিয়ে সি চিন পিংও তাঁর ভাষণে বলেন, সদস্যদেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নয়নে চীন একযোগে কাজ করবে।
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com