পশ্চিমবঙ্গ মাত্র ৮৮৭৫২ বর্গ কিলোমিটার ভূমি নিয়ে তৈরী হলেও, সে যেনো এক মিনি ভারত। নানা ভাষা, ধর্ম, বর্ণ ও অসংখ্য জাতপাতের সমাহার ঘটেছে রাজ্যটিতে। রাজ্যের রাজধানী কলকাতা একাই পৃথিবীর অসংখ্য জাতিসত্তাকে ধারন করে গৌরব ঘোষণা করে চলেছে। রাজ্যটির উত্তরে পাহাড়, নেপাল, সিকিম, ভুটান; দক্ষিণে সুন্দরবন এবং শতত তরঙ্গ ভঙ্গের বঙ্গোপসাগর; পূর্বে স্বজাতি বাঙালির স্বাধীন বাংলাদেশ আর বাঙালির পাঁজর থেকে ক্রমশ জন্ম নেওয়া অহম জাতির রাজ্য আসাম; পশ্চিমে বাঙালির আর এক পাঁজর ওড়িষ্যা, পৃথিবীর অন্যতম আদিম জাতিসত্তা সাঁওতালদের রাজ্য ঝাড়খণ্ড এবং বিহার। ১৯৪৭ সালে আপন শরীককে ভাগ বুঝিয়ে দিতে গিয়ে রাজ্যটি নিজের চেহারাকে করেছে বিকৃত - পশ্চাৎদেশ অত্যন্ত স্ফিত, কন্ঠনালী চাপা এবং মস্তক দুশ্চিন্তায় ঝুকে পড়া।
বিগত ৭৪ বছর ধরে আছড়ে পড়া উদ্বাস্তুর অসংখ্য তরঙ্গ রাজ্যটি নিজ জঠরে ধারন করেছে; ১৯৭১ সালে প্রায় এক কোটি শরণার্থী আশ্রয় ও খাদ্য জোগানোর অভিজ্ঞতায় সে সমৃদ্ধ। নানা নাজুক সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিতে রাজ্যটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করেছে; ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিস ধ্বংসের সময় বা ২০০২ সালের গোধরা কাণ্ডের প্রতিক্রিয়ার কোনো আঁচ লাগতে দেয় নি রাজ্যবাসীর গায়ে। সে রাজ্যের বিধান সভার নির্বাচনে বিজেপি জয় লাভ করে ক্ষমতায় আসতে চলেছে, এমন চাপান-উতোরে বাংলাদেশও বেশ কয়েক সপ্তাহ ভেসেছে।
আয়তন ও জনসংখ্যার বিচারে রাজ্যটি চতুর্থ স্থান অধিকার করলেও, ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে গুরুত্বের দিক থেকে রাজ্যটির অবস্থান তৃতীয়; কেন্দ্রীয় লোক সভায় রাজ্যটির আসন সংখ্যা ৪২ - উত্তর প্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের যথাক্রমে ৮০ ও ৪৮। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যটিতে রয়েছে বিধান সভা - যার সদস্যরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর নেতৃত্বে মন্ত্রী পরিষদ গঠন করে রাজ্য সরকার পরিচালনা করেন।
পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভায় মোট আসন ২৯৪। প্রার্থীর মৃত্যু জনিত কারণে দু'টি আসন বাদে ২৯২ আসনে নির্বাচন হয়েছে - ফলাফলে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস ২১৩টি, বিজেপি ৭৭টি ও অন্যান্যরা ২টি আসন পেয়েছে। প্রদত্ত ভোটের শতকরা হিসেবে তৃণমূল ৪৭.৯৪%, বিজেপি ৩৮.১৩%, সিপিএম ৪.৭২%, কংগ্রেস ২.৯২%, ফরওয়ার্ড ব্লক ০.৫৩%, বিএসপি ০.৩৯%, আরএসপি ০.২১%, সিপিআই ০.২০%, সিপিআই (এমএল) ০.০৩% এবং অন্যান্যরা ৪.৯৩% ভোট পেয়েছে। অনেকে একে মমতা ব্যানার্জির ক্যারিশমা হিসাবে দেখালেও, আমাদের কাছে এর তাৎপর্য আরো গভীরে বলে মনে হয়।
তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির রাজনৈতিক আদর্শের পার্থক্য খুব বেশী নয়। আমাদের মনে রাখা উচিৎ মমতা ব্যানার্জী ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকারে মন্ত্রী ছিলেন এবং কখনও কখনও নির্বাচনে বিজেপির সাথে আসন ভাগাভাগিও করেছেন। বিগত দশ বছরে রাজ্য ক্ষমতায় থেকে তৃণমূল সবুজ সাথী, কন্যাশ্রী, যুবশ্রীর মতো নানা জনপ্রিয় প্রকল্প চালু করলেও, সরকারি চাকুরী ও সরকারি কাজে ঘুষ ও দূর্নীতিতে আকন্ঠ ডুবে আছে; সারদা-নারদা কেলেংকারীতে জেরবার হয়েছে তৃণমূল। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গবাসী বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে - যার কারণ নিম্নরূপ হতে পারে :
এক. বিজেপি উত্তরবঙ্গে গোর্খাল্যাণ্ড, কামতাপুরী ও গ্রেটার কোচবিহার - এই তিনটি ছোট রাজ্য গঠনে নীগিগত সম্মতি জানিয়েছে। এতে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা ভূমি হারানের আতঙ্কে আছে। সারা ভারতে পনের কোটির অধিক বাঙালির একমাত্র হোমল্যাণ্ড পশ্চিমবঙ্গ - তার কোনো রকম অঙ্গচ্ছেদ তাই বাঙালিদের আর কাম্য নয়। বিজিপির বিপরীতে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের কোনো রকম অঙ্গচ্ছেদের বিরোধীতা করে বাঙালিদের সমর্থন ধরে রেখেছে।
দুই. বিজেপি মূলত হিন্দি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার চায়। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সংকোচনের একটা ভীতি বাঙালিকে পেয়ে বসেছে। বাঙালি ডান-বাম সকলে মিলে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার তাগিদ থেকে বিজেপিকে পরাজিত করার জন্য ঐক্যমতে পৌছাতেই পারে।
তিন. পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে বিজেপির পক্ষ থেকে প্রার্থী মনোনয়ন থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচারনা সকল ক্ষেত্রে হিন্দি বলয়ের নেতাদের প্রাধান্য ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিষয়টি এক সময় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুঝতে পারেন এবং এক নির্বাচনী সভায় বলতে বাধ্য হন - "পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী হবেন এখানকার ভূমিপুত্র।" কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্যমতো রাজ্যবাসী বিজেপির কোনো রাজ্য নেতাকে মূখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেখতে পায়নি। বিষয়টি বোঝার সুবিধার জন্য পার্শ্ববর্তী রাজ্য আসামের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা যায়। আসাম রাজ্য বিজেপির নীতি নির্ধারনে মূখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল ও রাজ্যের আরেক মন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মার ভূমিকা প্রকট। ফলে আসাম রাজ্যবাসী তাদের ভূমি সন্তানদের নেতৃত্বে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ আদায় করেছে এবং করবে - এ বিশ্বাস তাদের মধ্যে জন্মেছে। একই সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আসামে তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে বিজেপি ক্ষমতা গেলো। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপিতে সর্বানন্দ সানোয়াল বা হেমন্ত বিশ্বশর্মার মতো কোনো চরিত্রের দেখা মেলেনি। সে দিক থেকে রাজ্যবাসীর এ ধারনা হওয়া স্বাভাবিক যে, "বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানে হিন্দি বলয়ের আধিপত্য মেনে নেওয়া।"
চার. ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত কলকাতা ছিলো ভারতের রাজধানী। আধুনিকতার আলো তাই বাংলাকে প্রথম আলোকিত করেছিলো। রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহীকবি নজরুল ইসলাম সে আলোর উজ্জ্বল নক্ষত্র। সে বাংলায় বিজেপির অনেক নেতার বক্তব্য মানান সই হয় নাই। এমনকি বিদ্যাসাগরের মূর্তি চিনতে না পেরে ভাঙার বিষয়টি রাজ্যবাসীকে আহত করেছে। সে তুলনায় মমতা ব্যানার্জির আটপৌর জীবন বাঙালিকে আকর্ষণ করেছে।
পাঁচ. প্রায় দেড়শো দিন হতে চলেছে উত্তর-পশ্চিম ভারতের কৃষকরা বিজেপির কৃষিনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সারা ভারতের কৃষকের সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরাও বিজেপির কৃষক বিরোধী নীতিতে ক্ষুব্ধ। এই পালে হাওয়া লাগিয়েছে "নো ভোট ফর বিজেপি" প্রচারনা। যারা এই প্রচারনা চালিয়েছে তারা তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক নয়, বরং তৃণমূলের বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে সব সময় রাজপথে নেমেছে। এদের বামপন্থী ও বহুজনবাদী চরিত্রই বরং স্পষ্ট। এদের মূল বক্তব্য ছিলো "তৃণমূল খারাপ, কিন্তু বিজেপি ভয়ংকর।"
ছয়. "জয় বাংলা" ধ্বনি তৃণমূল কংগ্রেস এর আগে কখনও সে ভাবে ব্যবহার করে নি। বিজেপির "জয় শ্রীরাম" ধ্বনির বিপরীতে "জয় হিন্দ" ধ্বনি ব্যবহার করেও তৃণমূল যেনো বাঙালির মধ্যে জোশ আনতে পারছিলো না। অবশেষ "জয় বাংলা" ধ্বনি সে কাজটি সহজ করে দিলো। বিজেপির ধর্মীয় অনুভূতির বিপরীতে "জয় বাংলা" ধ্বনিতে বাঙালি জাতিসত্তার অন্তরাত্মাটি যেনেো জেগে উঠেছে।
সাত. মমতা ব্যানার্জি বুঝতে পেরেছিলেন বিজেপির ধর্মীয় অনুভূতির বিপরীতে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চেতনাকে কাজে লাগাতে হবে। পূর্ব বাংলার বাঙালি ১৯৬০ এর দশকে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারকে সে পথেই রুখে দিয়েছিলো। মমতাও সে পথে হেটেই বিজেপির রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারকে রুখে দিলেন।
আট. যে কোনো দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা একটা নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে। পশ্চিম বাংলার মুসলমানরা বুঝতে পেরেছিলো কংগ্রেস ও বামপন্থীরা আব্বাস সিদ্দিকীর নোতুন পার্টির সাথে জোট বাঁধলেও, তাদের পক্ষে বিজেপিকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। তাই বিগত দশ বছরে তৃণমূলের শাসন আমলে নানা বঞ্চনার বাস্তবতা থাকলেও, শুধুমাত্র বিজেপিকে পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে তৃণমূলকে ভোট দিতে মুসলিমদের কোনো দ্বিধা ছিলো না। মালদা-মুর্শিদাবাদের ঐতিয্যবাহী কংগ্রেস গড় বদলে গিয়ে তাই হয়ে ওঠে তৃণমূল গড়।
নয়. পশ্চিমবঙ্গে দলিত ভোট শতকরা ২৩ ভাগ। এই ভোটের বেশ বড় একটা অংশ মতুয়া - যাদের প্রধান সমস্যা নাগরিকত্ব। বিজেপি তাদের জন্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ করায় মতুয়ারা বিজেপির দিকে ঝুকে পড়ে। মমতা ব্যানার্জি এর পাল্টা মতুয়াদের আরাধ্য শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম তিথিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন, শ্রীশ্রীহরিচাঁদ-গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন এবং গঠন করেন মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদ ও নমঃশূদ্র বোর্ড। সার্বিক ভাবে দলিত আন্দোলনের স্বীকৃতি দিয়ে চালু করেন "পশ্চিমবঙ্গ দলিত সাহিত্য অকাদেমি।" তাছাড়া তৃণমূল কংগ্রেস দলিতদের জন্য সংরক্ষিত ৬৯ আসনের সাথে সাথে অতিরিক্ত ১০টি আসনে দলিত প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয় - যা বিজেপি করেনি। এ সব কারণে দলিত ভোটেও তৃণমূল বিজেপি থেকে এগিয়ে আছে।
দশ. নির্বাচন চলাকালীন করোনা মহামারী কেন্দ্রীয় সরকারকে ধরাশায়ী করে দেয়। করোনা মহামারীর অনিবার্য দ্বিতীয় ঢেউ সম্পর্কে আগাম সতর্কতা থাকার পরেও, সে বিষয়ে প্রস্তুতির চাইতে নির্বাচনী কাজে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কেনো বেশী ব্যস্ত ছিলেন - সে প্রশ্ন সামনে চলে আসে এবং অনিবার্য ভাবে তা পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে।
এগার. বিজেপির বক্তব্যে তৃণমূল কংগ্রেসের অপশাসন থেকে গুরুত্ব পেয়েছে সাম্প্রদায়িক বিভাজন। বিজেপি তৃণমূলের অপশাসনের কথা তুলে ধরে, তারা ক্ষমতায় আসলে কিভাবে সুশাসন উপহার দেবে তার কোনো রূপকল্প পশ্চিমবঙ্গবাসীর সামনে হাজির না করায় রাজ্যবাসী যারপরনাই হতাশ হয়েছে। বরং রাজ্যবাসী লক্ষ্য করেছে বিজেপি নেতাদের মুখের ভাষায় এবং দেহের ভঙ্গিমায় তৃণমূলের চাইতে অধিকতর দাম্ভিকতা প্রকাশ পাচ্ছে। স্বভাবতই রাজ্যবাসী ভোটের মাধ্যমে বিজেপিকে তার জবাব দিয়েছে।
বার. বিজেপির পুরুষতান্ত্রিক চরিত্রটা পশ্চিমবঙ্গবাসীর চোখ এড়ায় নি। নানা রকম প্রগতিশীল আন্দোলনের কারণে এ রাজ্যের নারী মুক্তি প্রশ্নটি বেশ জোরালো। বিজেপির বিপরীতে মমতা ব্যানার্জি হয়ে উঠেছেন নারীদের ভরসা। নির্বাচনে তাই জনপ্রিয় শ্লোগান ছিলো "বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়।" নির্বাচনে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো - যার বিপুল বৃহত্তর অংশ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে।
তের. মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিজেপি দু'টি ভুল করে। ১. সদ্য আগত তৃণমূল নেতাদের মনোনয়ন - এমনকি যোগ দেওয়ার তিন ঘন্টার মধ্যে প্রার্থী মনোনয়নের ঘটনাও আছে। ২. এমন অনেক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে - যাদের নির্বাচন করার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নাই। এ ভাবে পরীক্ষিত নেতারা মনোনয়নের ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয়েছে।
চৌদ্দ. ইতিপূর্বে গণ আন্দোলনের জোরে কংগ্রেসকে হটিয়ে বামফ্রন্ট এবং বামফ্রন্টকে পরাজিত করে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসেছে। বিজেপি সম্প্রতি তেমন কোনো গণ আন্দোলন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সংগঠিত করতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা বদলের এই বৈশিষ্ট্য উপেক্ষা করার যায় না।
পনের. আমাদের এই আলোচনা উদ্দেশ্য এই নয় যে, এই নির্বাচনে জয় লাভে মমতা ব্যানার্জির ব্যক্তি ইমেজ কাজ করেনি। বিজেপি যে ভাবে নানা লোভ দেখিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের তাবড় তাবড় নেতাদের ভাগিয়ে নিচ্ছিল, সে রকম নাজুক অবস্থায় দলকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে পেরেছিলো মমতা ব্যানার্জির ইমেজ। সংসদীয় রাজনীতিতে ইমেজ অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর। সে কারণে আমরা দেখি ভারতের লোক সভা ভোটে মোদী ইমেজ কাজ করে, আর পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভা নির্বাচনে মমতা ইমেজ ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। মমতার চট জলদি সিদ্ধান্তও এ ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে। তাঁর মন্ত্রী সভার সদস্য শুভেন্দু অধিকারী দল ত্যাগ করে মমতাকে নন্দীগ্রাম আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চ্যালেঞ্জ জানালে, ব্যানার্জি চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেন। এর প্রধান দিক হচ্ছে অধিকারী পরিবারের গড় হিসাবে পরিচিত মেদিনীপুরে সব আসনের পরিবর্তে অধিকারীদের নন্দীগ্রামের একটি আসনে আটকে দেন মমতা ব্যানার্জি। সে আসনে শেষ পর্যন্ত মমতা হেরে গেলেও, তাঁর লড়াকু মনোভাবটি পুরো নির্বাচনে কর্মীদের উজ্জীবিত রাখে। নন্দীগ্রামে প্রচারে গিয়ে প্রতিপক্ষের আক্রমনে পা ভেঙ্গে তিনি পশ্চিমবঙ্গবাসীর সহানুভূতিও পেয়ে যান। সারা নির্বাচনী প্রচারে হুইল চেয়ারে বসে এক পা দিয়ে খেলে তিনি গোল করতে সমর্থ হয়ে গেলেন। কুমারী এক মেয়ের একাকী অঢেল টাকা, সুসংগঠিত কর্মী বাহিনী আর কেন্দ্রীয় সরকারের সীমাহীন ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়ে যাবার লড়াকু মনোভাব পশ্চিমবঙ্গবাসীকে মুগ্ধ করে বৈকি!
বিজেপির ক্ষমতা আসা পশ্চিমবঙ্গবাসী এবার ঠেকাতে পারলেও, ভবিষ্যতে সে কাজ সম্ভব হবে কিনা? সে বিষয়টা খানিকটা বাংলাদেশের উপরও নির্ভর করে। এবার বিজেপি পশ্চিম বাংলায় ক্ষমতায় আসলে তার প্রভাব পড়তো বাংলাদেশের রাজনীতিতে। বাংলাদেশ অসম্প্রদায়িক রাজনীতি দূর্বল হলে তার প্রভাব পড়বে পশ্চিম বাংলায়। বাঙালি জাতিসত্তার একটি অংশ সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে ডুবে থাকবে, আর অন্য অংশটি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির স্বর্গরাজ্য হবে এমনটি আশা করা বাস্তব সম্মত নয়। তাই উভয় বাংলার বাঙালিদের বাঙালি চেতনা বিকাশের কাজ সমান তালে এগিয়ে নিতে হবে। পশ্চিম বাংলার মানুষ "জয় বাংলা" শ্লোগানকে সামনে এনে সে সত্যেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
নি এম/উৎপল বিশ্বাস
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com