হে প্রভু যে নারীর শুধুমাত্র বস্ত্রহরণের চেষ্টা করায় তুমি স্বয়ং কেদে ভাসিয়েছো। প্রভু তোমার সেই দুঃখের কথা আজ সবাই ভুলে গেছে। যেটাকে কেন্দ্র করে এতো বড় যুদ্ধ রচনা করেছো সেই নারীর সাথে আজ জানোয়ারদের থেকেও অধিক নির্মম আর ঘৃণিত কাজ করা হচ্ছে। জানি প্রভু আমাদের থেকেও শতসহস্র গুণে বেশি কষ্ট পাচ্ছো তুমি।কিন্তু আমরা দুর্বল মনুষ্য জাতি এটা সহ্য করতে পারছি না প্রভু। জানি প্রভু তুমি প্রতিনিয়ত আমাদের ক্ষমা করার জন্য রাস্তা খুজছো, কিন্তু আমরা নিজের পাপের জন্য বাধা হয়ে দাড়িয়ে আছি। জানি প্রভু এরকম পরিস্থিতি হওয়া এ যুগের ধর্ম। কিন্তু এরূপ নিয়তি তোমার সৃষ্টি সহ্য করতে পারছে না প্রভু। হে গোবিন্দ নারী-পুরুষ সর্বদা সমান এটা তো তুমিই বলেছিলে। কিন্তু তোমার সেই কথা উপেক্ষা করে মানবজাতির এক অংশ অন্য অংশকে এভাবে নিপীড়ন করছে। হে প্রভু এগুলো আমরাই দেখতে পাচ্ছি না, তুমি কি করে দেখছো? প্রতি মুহুর্তে সবাই তোমার হৃদয়ে এভাবে আঘাত করছে।আর তুমি নিয়তির যা স্বয়ং তুমিই বাইরে না গিয়ে এভাবে সহ্য করে যাচ্ছো।
হে হরি নারীকে নিয়ে তোমার সেই বাণীগুলো আবারও স্মরণ করছি। তুমিই তো বলেছিলে যে-
সমাজে সর্বদাই স্ত্রী- লোকদের সাথে অন্যায় হয়। মানব সমাজ স্ত্রী- লোককে সর্বদা শোষণ, অন্যায় আর অপমান দিয়েছে। আপনারা নিজেদের আশেপাশে দেখুন, সমগ্র ইতিহাসকে দেখুন এই একই রূপ দেখা যাবে যে পুরুষের ঈর্শা, অহংকার, বৈরিতা, লালসা, এই সব কুচিন্তার পরিনাম স্ত্রী-লোকই ভোগ করে। যুদ্ধ পুরুষ করে আর পরাজিত নগরে স্ত্রী-লোকের সাথে বলাৎকার করা হয়। পুরুষ মদ্যপান ও দূতক্রীরায় নিজের সম্পত্তি হারায়, আর স্ত্রী- লোকদের ভাগ্যে নেমে আসে ক্ষুধা। পুরুষের অহংকার ক্ষুন্ন হয় আর স্ত্রী লোকের স্বাধীনতা ও সুখে বাঁধা উৎপন্ন হয়ে যায়। পুরুষ জীবনে পরাজিত হয়ে পরিবারকে ত্যাগ করে আর স্ত্রী নিজের সন্তানদের ক্ষুধা নিবারনের তারনে সংঘর্ষ করতে থাকে। সমগ্র সংসারের দুঃখের হিসাব করুন স্পষ্ট দেখতে পাবেন যে পুরুষের তুলনায় স্ত্রী-লোক অধিকতর দুঃখ ভোগ করে। এ কোন প্রকারের সমাজ রচনা করেছি আমরা? যেখানে মনুষ্যজাতীর অর্ধেক ভাগ অপর অর্ধেক ভাগকে নিরন্তর পদদলিত করছে। আর সেই পদলিত স্ত্রী-লোক মানুষের ভবিষ্যতের জন্মদায়িনী?
সৃষ্টিকে দেখুন- নতুন বৃক্ষকে জন্মদানকারী বীজের আসপাশে ঈশ্বর ফুলের পাপরী নির্মাণ করেছেন। তাকে রং ও সুগন্ধ দিয়ে ভরে দিয়েছেন। যেখানে ভবিষ্যতের জন্ম হয় সেখানে তো কেবল মাত্র সৌন্দর্য, কেবল সুখ সন্তোষ ও সম্মান হওয়া আবশ্যক নয় কি? কিন্তু সমাজ স্ত্রী- লোককে দুঃখ দিয়ে সমস্ত ভবিষ্যৎকে দুঃখ দ্বারা পূর্ণ করতে থাকে। প্রহার, শোষণ, পীরা এই সবে ঝলসে যাওয়া স্ত্রী- লোক স্বাস্থ্যবান সুখী সন্তানের জন্ম কোন প্রকারে দেবে? অর্থাৎ যে যে সময় কোন স্ত্রী- লোকের অপমান হয়, কোন স্ত্রী-লোক এর উপর শোষণ হয়, কোন নারীর কেশ আকর্ষন করা হয় সেই সময় কোন না কোন রূপে এক যুদ্ধের জন্ম হয়। কোন না কোনভাবে মহাভারতের আরম্ভ হয়।স্বয়ং বিচার করুন। বারংবার বিচার করুন।
দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় তিনি সকল আশা ত্যাগ করে ঈশ্বরের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। বলেছেলিন যে আমায় আপনারা কেওই রক্ষা করতে পারবেন না, আমার রক্ষা এখন স্বয়ং ঈশ্বর করবেন। তখন তিনি প্রাণপনে তার গোবিন্দ কে ডেকেছিলেন। তখন তার বস্ত্রহীন হওয়ার বদলে বাকি সকল পুরুষেরা যারা এগুলো করছে বা চুপ থেকে সহ্য করেছে তারা সকলেই বস্ত্রহীন হয়ে গিয়েছিলো। কতজন নারী আছেন যারা এরকম মুহুর্তে সম্পূর্ণ বিশ্বাস রেখে ঈশ্বরকে ডাকেন। কতজন নারীর মনে এরকম জোর আছে। যদি ঈশ্বরের নিকট সম্পূর্ণ বিশ্বাস রেখে ডাকতেন তাহলে তিনি অবশ্যই কাউকে না কাউকে পাঠাতেন অথবা তিনি স্বয়ং নিজেই আসতেন। সেটা দ্বাপর যুগই হোক কিংবা এই ঘোর কলিযুগ।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com