বাগেরহাটের চিতলমারীতে সুদখোরদের দৌরাত্বে হাসিকনা বিশ্বাস (৩৩) নামের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আত্মহত্যা করেছেন।
সোমবার দুপুরে উপজেলার খড়মখালী গ্রামে তার বাড়িতে ঘরের আড়ায় ওড়না পেচিয়ে এ দূর্ঘটনা ঘটায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
মৃত হাসিকনা বিশ্বাস ছিলেন ৯৭ নং দক্ষিণ শিবপুর মধ্য পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। তার স্বামী যুগল কান্তি ডাকুয়া স্থানীয় আজিজুল হক কিন্ডারগার্টেন এর প্রধান শিক্ষক।
এ ঘটনার পর থেকে সুদে কারবারি থ্রি স্টার এনজিওর কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিকাশ বালা, অনুপ বসু, রত্না মন্ডল, এক স্বর্ণ দোকানদার, যোতিশ মন্ডল, রেফাজুল খা পলাতক রয়েছে।
মৃত শিক্ষিকার স্বামী যুগল কান্তি ডাকুয়া জানান, জমি কেনার সময় তারা স্থানীয় কিছু লোকের কাছ থেকে সুদে টাকা নেয়। সময় মতো তাদের মাসিক সুদ পরিশোধ করছিল তারা। তবে কিছুদিন আগে স্থানীয় থ্রি স্টার এনজিও জোরপূর্বক তাদের বসতবাড়ির ২৬ শতাংশ জমি লিখে নেয়। এরপর থেকে অন্যান্য পাওনাদার টাকার জন্য চাপ দেয়। গত রবিবার (১৯ জুলাই) রত্না মন্ডল এবং বিকাশ বালা টাকার জন্য তাদের (স্বামী স্ত্রী এক সাথে) রাস্তার উপর আটক করে এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি দেয়। একপর্যায়ে রত্না মন্ডল বলে, "টাকা দিতে না পারলে তোর বউকে দে" এমন কথার প্রতিবাদ করতে গেলে বিকাশ বালা তার উপর জুতোপেটা করে। সোমবার সকালে রবিন সরকার টাকার জন্য তাদের বাড়িতে এসে বকাঝকা করে যায়। দুপুরে যুগল কান্তি ডাকুয়া বাড়িতে প্রবেশকালে অনুপ বসুকে তার লোকজন নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে। তখন সে অনুপ বসুকে ডেকে ঘরের বারান্দায় (ঘরের সামনের বারান্দা) বসে টাকার বিষয়ে কথাবার্তা বলে। তারা চলে গেলে তিনি ঘরে ঢুকে পেছনে বারান্দায় আড়ার সাথে তার স্ত্রী হাসিকানকে ওড়না পেচানো অবস্থায় ঝুলতে দেখে এবং চিৎকার দিলে আসপাশের লোকজন ছুটে আছে।
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি আরও জানান, ওরা আমার স্ত্রীকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে। আমি এই হত্যার বিচার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, চিতলমারীতে যারা সুদে টাকা লাগায় তারা খুব প্রভাবশালী। এদের কথাবার্তা একটুও ভালো না। এদের চাপে এ উপজেলা থেকে প্রায় ১০/১২ টি পরিবার ভারত চলে গেছে। গালায় দড়ি আর বিষ খেয়ে মারা গেছে ৪/৫ জন। টাকার জোরে এরা থানা পুলিশের ভয় পায় না। হাসিকনা ম্যাডামকে সেদিন বিকাশ বালা আর রত্না মন্ডল যা বলেছে তা মুখে আনা যায় না। আর একটা এনজিও তো টাকার চাপ দিয়ে তাদের বাড়িঘর সব লিখে নিছে। এদের না থামালে এভাবে কতো মানুষ যে মরবে তার কোন হদিস নাই।
চিতলমারী শিক্ষা অফিসার মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, আজ দুপুরের পর আমাদের একজন প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম ফকির ফোন করে জানান হাসিকনা বিশ্বাস গলায় রশি নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক ছিলেন। তার পাঠদানের আলাদা ক্ষমতা ছিল। তার মৃত্যু নিয়ে কোন কারসাজি থাকলে আমরাও তার বিচার চাই।
চিতলমারী থানার সাব ইনস্পেক্টর নিকুঞ্জ রায় বলেন, হাসিকনা বিশ্বাসের মৃতদেহের সুরতহাল করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখন রিপোর্ট এলে জানা যাবে কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে।
মৃত হাসিকনা বিশ্বাস চিতলমারী উপজেলার চিলুনী গ্রামের খগেন বিশ্বাসের মেয়ে। গত ১৭ বছর আগে বাগেরহাট কাঠিগোমতি গ্রামের জিতেন ডাকুয়ার ছেলে যুগল কান্তি ডাকুয়ার সাথে বিবাহ হয়। চাকুরির সুবাদে তারা চিতলমারী চলে আসে এবং খড়মখালী গ্রামে জমি কিনে নতুন বসতি গড়ে তোলেন।
নি এম/ বিভাষ