ভারতের রাজস্থান রাজ্যের একটি ছোট জেলা শহর ভিলওয়ারা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর লক্ষ্যে সফল এক অভিযান চালানোর পর সারা দেশের ভাইরাস হটস্পটগুলোতে সেই একই পদ্ধতি প্রয়োগ করার কথা ভাবা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই 'ভিলওয়ারা মডেল' নামে পরিচিত হয়ে ওঠা এই পদ্ধতির মূল কথাটা হল 'রুথলেস কন্টেইনমেন্ট' – অর্থাৎ কঠোরভাবে মানুষজনকে ঘরের ভেতর আটকে রাখা।
কিন্তু কীভাবে ভিলওয়ারাতে এই মডেল সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে এবং এর সুবিধা-অসুবিধাগুলোই বা ঠিক কী?
রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর থেকে আড়াইশো কিলোমিটার দূরে একটি জেলা শহর ভিলওয়ারা – এটি ভারতের অন্যতম প্রধান টেক্সটাইল হাব হিসেবেও পরিচিত।
ভারতে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে এই শহরটিই ছিল দেশের প্রধান হটস্পট।
গত ১৯ শে মার্চ ভিলওয়ারাতে প্রথম সংক্রমণের মাত্র চারদিনের ভেতর সেখানে তেরোজন করোনা-পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন, আর ৩০ শে মার্চের মধ্যেই সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে যায় ছাব্বিশে।
কিন্তু এর পরই দেখা যায় একটা নাটকীয় পটপরিবর্তন – পরবর্তী দশদিনে পুরো জেলায় আর মাত্র একজন রোগী শনাক্ত হয়েছেন, আর ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন সতেরজন।
কিন্তু কীভাবে এটা সম্ভব হল?
রাজস্থানের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট জানাচ্ছেন, "আমরা সঙ্গে সঙ্গে ভিলওয়ারাতে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করি – যে কন্টেইনমেন্ট প্রয়োগ করা হবে কঠোরভাবে ও কোনও ছাড় না দিয়ে – আর তাতে আমরা সফল হই।"
"সরকারি রোডওয়েজের বাস, বেসরকারি যানবাহন বা ভ্যানের চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যতগুলো পজিটিভ কেস এসেছিল, তার প্রত্যেকটার ক্লাস্টার ম্যাপিং তৈরি করা হয় – পুরো জেলায় হাজার হাজার লোককে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। মানুষের সহযোগিতায় পুরো ব্যবস্থাটা এমনভাবে করা হয় যাতে ভাইরাস কিছুতেই ছড়াতে না-পারে", বলছিলেন মুখ্যমন্ত্রী
২২ শে মার্চের মধ্যেই রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন সাড়ে আটশো টিম গড়ে তুলে লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার্ভে শুরু করে দেয়।
প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষরও বেশি বাড়ির দরজায় গিয়ে তারা প্রায় চব্বিশ লক্ষ লোকের ওপর জরিপ চালায় – এবং যাদেরই ফ্লু-র মতো উপসর্গ দেখা যায়, তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এমন কী তারা সেই নির্দেশ মানছেন কি না, তা দেখতে একটি অ্যাপের মাধ্যমে তাদের গতিবিধিও ট্র্যাক করা হতে থাকে।
হিন্দুস্থান টাইমসের সাংবাদিক অদিতি প্রসাদ জানাচ্ছেন, "এর সঙ্গে প্রথম দিন থেকে গোটা এলাকায় জারি করা হয় কারফিউ। জেলার সীমান্ত সিল থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ কিন্তু নিশ্চিত করা হয়। ফোন করলে পুলিশ গিয়ে বাড়ি বাড়ি খাবারদাবার ও ওষুধের হোম ডেলিভারি দিয়ে আসে।"
জনপ্রাণীর দেখা নেই ভিলওয়ারার রেল স্টেশনেও
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট একজন জাদুকর পরিবারের সন্তান – নিজেও তিনি ম্যাজিক দেখাতে খুব ভালবাসেন – কিন্তু ভিলওয়ারাতে তার প্রশাসন যে 'ম্যাজিক' দেখিয়েছে তেমনটা বোধহয় তার সারা জীবনেও অভূতপূর্ব।
যে ভিলওয়ারা 'ভারতের ইটালি' হয়ে উঠতে পারে বলে মাত্র সপ্তাহদুয়েক আগেও মিডিয়া পূর্বাভাস করছিল, রাজস্থানের ওই জেলাটি সে আশঙ্কাকে আপাতত ভুল প্রমাণ করতে পেরেছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গৌবাও এখন বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন বিভিন্ন হটস্পটে কীভাবে ভিলওয়ারা মডেল প্রয়োগ করা যায়।
যদিও ভিলওয়ারার মতো একটি শিল্পাঞ্চল ও গ্রামীণ এলাকা-মেশানো জেলায় যে মডেল সফল হয়েছে, মুম্বাইয়ের ধারাভির মতো ঘিঞ্জি বস্তিতে তা আদৌ কাজে লাগানো যাবে কি না, তা নিয়ে বেশ সংশয়ও আছে।
সূএ: বিবিসি
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com