জো বাইডেনের বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। তার জন্মের আগে তিনি ব্যবসায় সাফল্য পেয়েছিলেন। কিন্তু জো-র জন্মের পর তার ব্যবসায় ধস নামে। বাইডেনের কৈশোর কেটেছে পারিবারিক অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে। পেনসিলভানিয়ায় খুবই সাদামাটা এক বাসায় যৌথ পরিবারে বড় হয়েছেন তিনি। তার পরিবার ছিল খুব ধার্মিক। ক্যাথলিক মূল্যবোধ ও তার ধর্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছিল পারিবারিক ধর্মচর্চার সুবাদে।
শৈশবে তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তোতলামি কাটিয়ে ওঠা। স্কুলের উঁচু ক্লাস পর্যন্ত এই সমস্যা তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। পড়তে গিয়ে তার তোতলামির জন্য সহপাঠীরা তো বটেই, এমনকি শিক্ষকরাও তাকে নিয়ে ঠাট্টা করতেন। আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, এখনও আমার মনে আছে সেই যন্ত্রণার কথা, লজ্জা রাগ আর অপমানের দিনগুলোর কথা।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শান্তভাবে কবিতা আবৃত্তি ও সংযতভাবে কথা বলা আয়ত্ত করতে করতে হাইস্কুল পার হওয়ার পর তোতলামো কাটিয়ে ওঠেন তিনি। স্কুল শেষে তিনি পড়তে যান ডেলাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখান থেকে সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান আইন বিষয়ে পড়তে।
কলেজেই পরিচয় হয়েছিল নেইলিয়া হান্টারের সঙ্গে। লেখাপড়া শেষে ফিরে যান ডেলাওয়ারের উইলমিংটন শহরে। বিয়ে করেন নেইলিয়াকে। উইলমিংটনেই শুরু হয় তার রাজনৈতিক জীবন। একটি বড় আইনি প্রতিষ্ঠানে তিনি আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ধনী ও ক্ষমতাশালীদের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে তিনি অল্পদিনেই হাঁপিয়ে ওঠেন।
সাধারণ মানুষের হয়ে বিবাদী পক্ষে আইনে লড়ার কাজ নেন তিনি। নগর পরিষদের একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জেতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাজনীতিতে তার পথচলা। এরপর আসে সিনেটে তার বিজয় ১৯৭২ সালে। অনেক দিন ওই আসনে থাকা রিপাবলিকান সিনেটরকে হারিয়ে তিনি সবার দৃষ্টি কাড়েন। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় কনিষ্ঠ সিনেটর।
রাজনৈতিক জীবনে জো বাইডেন তখন সফল তরুণ। মাত্র ৩০ বছর বয়সে দুই মেয়াদে সিনেটর থাকা রিপাবলিকান প্রার্থীকে হারিয়ে তিনি সিনেটে আসন জয় করেছেন। ওই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের যেখানে ভরাডুবি হয়েছে, সেখানে তার এই অভাবনীয় জয়ের পর রাজনীতির অঙ্গনে তিনি তখন হয়ে উঠেছেন ডেমোক্র্যাটিক দলের সম্ভাবনাময় তরুণ।
মাত্র তিন মাস আগে তিনি প্রার্থিতার লড়াইয়ে নামার পর ১৯৮৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এই বিষয়ে স্মৃতিকথায় লিখেছেন, এ জন্য দায়ী আমি নিজে। নিজের ওপর রাগ আর হতাশায় ভুগছি। আমেরিকার মানুষকে আমি কীভাবে বোঝাবো এটাই জো বাইডেনের আসল পরিচয় নয়। এটা শুধু আমার মস্ত একটা ভুল।
এটি ছিল ১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য লড়াই। বাইডেনের প্রথমবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার উদ্যোগ লজ্জাজনক ঘটনায় হোঁচট খায়। তার বিরুদ্ধে অন্যের লেখা চুরি ও অসততার অভিযোগ আনা হলে তিনি প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
পারিবারিক বিভিন্ন আঘাত সামলে বাইডেন সিনেটের বিচার কমিটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে নিজেকে আরও তুলে ধরতে শুরু করেন। তবে ১৯৮৮ সালের ওই নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘটনাকে অনেকে তার জন্য শাপে বর বলে মনে করেন।
বিশ বছর পর আবার নতুন করে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার রেসে নামেন বাইডেন। ২০০৮-এর নির্বাচনের প্রার্থিতার দৌড়ে তিনি রাজনীতিতে আর নতুন মুখ নন, তিনি একজন প্রবীণ রাজনীতিক। তবে সেই লড়াইয়ে তিনি সফল হননি। বারাক ওবামা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পান প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার জন্য। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে বারাক ওবামা তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিংমেট হিসেবে বেছে নেন জো বাইডেনকে।
কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে শুরু হলেও ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের মনোনীত প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ী হন জো বাইডেন। তার প্রতিপক্ষ বার্নি স্যান্ডার্সকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হওয়ার টিকিট পান তিনি।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, তার এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ আট বছর বারাক ওবামার ডেপুটি হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন। এর সুবাদে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ ডেমোক্র্যাটদের বিপুল সমর্থন পেয়েছেন। একজন কৃষ্ণাঙ্গ-ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী কমলা হ্যারিসকে তিনি বেছে নিয়েছেন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিংমেট হিসেবে।
প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তার তৃতীয় প্রচেষ্টা এবং দীর্ঘ ৪০ বছরের স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত পূরণ হলো। আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক পপুলার ভোট আর ২৭০টিরও বেশি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে বিজয়ী হন জো বাইডেন।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com