রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
রবিবার, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
সর্বশেষ
 
 
আমার জীবনের গল্প; ড: যশোদা জীবন
প্রকাশ: ১১:০৪ pm ২৪-০৪-২০২০ হালনাগাদ: ১১:০৪ pm ২৪-০৪-২০২০
 
এইবেলা ডেস্ক
 
 
 
 


মেঘলা আকাশ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে তার সাথে মেঘের গর্জন, সুকান্ত ভট্টাচার্য্য বলেছিল ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। গদ্যময় পৃথিবীর নির্মমতা আমাকে গ্রাস করেছিল দিনটা ছিল মঙ্গলবার ১৯৮৭ সাল। আকাশে প্রচণ্ড মেঘ করেছে এদিকে ঘরে খাবার নেই.! বাবা মার বয়স হয়েছে বাড়ির বড় সন্তান হিসেবে আমার দু:শ্চিন্তার শেষ নেই। গত তিনদিন ধরে না খেয়ে থাকার মত করে আমরা বেঁচে আছি, প্রথম দিন ভুট্টার আটা দিয়ে কোনরকম রুটি করে খাওয়া হলো, দ্বিতীয় দিন ঢেঁকিতে ছাটা গমের আটা দিয়ে কোনরকম পার করলাম, এরপর খাওয়ার মত আর কিছুই নেই। অভাব আর দারিদ্রতা মানুষকে যখন ঘিরে ধরে তখন আপনজনেরাও কেমন পর হয়ে যায়, আমাদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। খাবার আর অর্থ দিয়ে সহযোগিতা তো অনেক দূরের কথা কেউ খোঁজ নিতে পর্যন্ত আসেনি আমরা কেমন আছি.? ক্ষুধা আর দারিদ্রতা আমাকে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করিয়েছে ক্ষুধার যন্ত্রণা কাকে বলে। কোন উপায়ন্তর না দেখে বৃষ্টিকে মাথায় করে আমাদের থাকার জন্য একটা ভাঙা ছনের ঘর ছিল ঘরের পেছনে এবং পাশে কিছু নারকেল গাছ ছিল একের পর এক সে গাছে উঠছিলাম নারকেল পারবো বলে। নারকেল গাছ থেকে কিছু নারকেল পেড়ে নামতেই হাত ফসকে গিয়ে গরগর করে আমি নিচে পড়ে গেলাম। অভ্যাস ছিল না পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছিল গাছে উঠতে মনোবল হারাইনি কারণ এই যুদ্ধে আমাকে জয়ী হতে হবেই। খালি গায়ে বুকের দিকে তাকিয়ে দেখি প্রচন্ড পরিমানে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, আমার বুকের ভেতরে এত বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছিল যে কারণে বাইরের রক্ত দেখে বিচলিত হয়নি। ছিলে যাওয়া বুক বাড়ির কেউ যাতে দেখতে না পারে তাই গামছা দিয়ে বুকটা ঢেকে নারকেল গুলোকে মাথায় নিয়ে নীরবে কানাইপুর হাটের দিকে রওনা হলাম, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি নামছে আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় আকাশের মেঘের মতো করে আমার পেটের মধ্যেও গুড়ুম গুড়ুম করে ডাকছে! কে শুনবে এই ক্ষুধার বজ্রপাতের ডাক। হাটে পৌঁছে নারকেল গুলো অল্পকিছু টাকায় বিক্রি করলাম যা দিয়ে এক বেলার চাল ডাল আর ছোট্ট দুটি ইলিশ মাছ যাকে আমরা বলি জাটকা ইলিশ কিনে বাড়ি ফিরে আসলাম। বাড়ি.? বাড়ি বলতে ওই একটা ছনের ঘর, যেখানে আমরা সবাই মিলে থাকতাম, বৃষ্টি নামলেই সেই ঘরের একপাশে ঝর ঝর করে পানি পড়তো বাবা আবার সেই পানি আটকানোর জন্য কলা গাছের পাতা কেটে চালের উপর দিয়ে দিত, আর মা আমাদের সবাইকে নিয়ে ঘরের যে পাশে পানি পড়তো না ঐ পাশটাতে বসতেন। বৃষ্টি থেমে গেলে মা রান্না করবে আর আমরা ভাবছি এবার অন্তত কিছু রান্না হবে এই ভেবে চোখে মুখে আনন্দ হাসির খেলা আর বুকের ভিতর অদেখা কান্নার জল। রান্না শেষ করে মা আমাদের খাবার দিল আমরা সবাই মিলে খেতে বসলাম, কয়েক দিন না খেয়ে থাকা অভুক্ত পেট খাবারের গন্ধে যেন অর্ধেক পেট ভরে গেল আমাদের। আর খাবারের স্বাদ.! বলে বোঝাতে পারব না তবে এতটুকু বলতে পারি ঈশ্বর যেন নিজে আমাদের জন্য খাবার পাঠিয়ে ছিল যার স্বাদ আজ অব্দি আমি কোন খাবারে পাইনি। আজও বৃষ্টি হলে আমার মন চায় সে খাবারের স্বাদ নিতে, বৃষ্টি হলে বাসাতে রান্না হয় বড় ইলিশ ভালো পরিবেশে খাবারের আয়োজন কিন্তু কোন কিছুতেই আমার মন ভরে না, সেই স্বাদ আর ফিরে পাই না। সেই দিনের সেই স্বাদ আমার রক্তের সাথে মিশে আছে, বৃষ্টি নামলেই সেই স্বাদের গন্ধ ভেবে আজও আমার চোখে জল আসে, বৃষ্টি আর বৃষ্টি ভেজা মেঘলা আকাশ জীবনের বন্ধু হয়ে আজও আমায় সব মনে করিয়ে দেয়, আমি কি আমার সেই দিন আর মেঘলা আকাশ ভুলে গেলাম নাকি? ১. চলবে....

নি এম/

 
 
 
   
  Print  
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
আরও খবর

 
 
 

 

Editor & Publisher : Sukriti Mondal.

E-mail: eibelanews2022@gmail.com

a concern of Eibela Ltd.

Request Mobile Site

Copyright © 2024 Eibela.Com
Developed by: coder71