লক্ষ্মী হলো ইশ্বরের মাতৃ রুপ। ইনি ভগবতী দূর্গার অরেক রুপ। ইনি পালনকারীনি। ইনি যজ্ঞবিদ্যা, আত্মবিদ্যা। ইনি যাবতীয় গুহ্যবিদ্যা ও মহাবিদ্যা। ইনিই বিমুক্তিফলদায়নী। তিনি গৃহস্থের ঘরে গৃহলক্ষ্মী, রাজার মন্দিরে রাজলক্ষ্মী।
সঠিক নিয়মে যদি লক্ষ্মীর পুজা করা হয় তাহলে তার কৃপা খুব সহজেই পাওয়া যায়। তাঁর আরাধনায় যদি তিনি সন্তুষ্ট হন, তা হলে সংসার ধন সম্পত্তিতে ভরে ওঠে। মহালক্ষ্মীর পুজোপাঠে ধন, মান, যশের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক সুস্থতাও আসে।বৃহস্পতি হল লক্ষ্মীর প্রতিক। বৃহস্পতি শুভ গ্রহ। তাই বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর আরাধনা করলে সকল দুঃখ দূর হয়। আর্থিক সমস্যারও সমাধান হয়। যদি কোনও বৃহস্পতিবার পূর্ণিমা হয়, তবে সেই দিন কোনও রমণী উপবাসে থেকে লক্ষ্মীমাতার পুজা করলে ধন-সম্পদে গৃহ পূর্ণ হয় এবং সকল সমস্যার সমাধান হয়। শরৎকালে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন তিনি থাকেন জাগ্রত। সে দিন মায়ের পুজো, স্তব ও দ্বাদশ নাম পাঠ করলে আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
প্রতি বৃহস্পতিবার শাস্ত্রবিধি মেনে প্রতি ঘরে ঘরে বাড়ির মহিলারা চাল বাটার আলপনা দিয়ে ঘর সাজান। ধানের শিষ, আর কলার খোল দিয়ে তৈরি নৌকা ভর্তি শস্য দিয়ে মা লক্ষ্মীর আরাধনা হয়ে থাকে। সন্ধ্যা হলেই বাড়িতে বাড়িতে শোনা যায় শঙ্খ ও উলুর ধ্বনি৷
তার প্রসিদ্ধ নাম শ্রী, কমলা, বিদ্যা, বিষ্ণুপ্রিয়া, সতী, পদ্মালয়া, পদ্মাহস্তা, পদ্মাক্ষী, ইশ্বরী, নিত্যা, সত্যাগত, শুভা, ক্ষীররোদতনয়া, ক্ষমারুপা, অনন্তলোকলাভা, ভুলীলা, সুখপ্রদা, বেদবতী।
যে মানুষ ধর্মের পথে থাকে, সত্কর্মের মাধ্যমে ধন উপার্জনে করতে যে তত্পর, তাঁকেই কৃপা করেন মা লক্ষ্মী। মোট ১৬ প্রকার সম্পদ প্রদান করেন তিনি— খ্যাতি, জ্ঞান, সাহস ও শক্তি, জয়, সুসন্তান, বীরত্ব, স্বর্ণ, অন্যান্য রত্নরাজি, শস্য, সুখ, বুদ্ধি, সৌন্দর্য, উচ্চাশা, উচ্চভাবনা, নৈতিকতা, সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ জীবন। আবার মা লক্ষ্মীর কৃপালাভের পরেও যে ধর্ম ও সত্কর্মের পথ থেকে বিচ্যুত হয় না, ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে উপার্জিত অর্থ মানুষের উপকারে ব্যয় করে, তারই প্রকৃত মোক্ষলাভ ঘটে। অর্থাত্ একটি সুস্থ, সুন্দর, সত্ জীবনদর্শনের কথা উঠে আসে মা লক্ষ্মীর মহিমা বর্ণঁনায়। তাই দেবী অপরিচ্ছন্ন জায়গায় কখনও থাকেন না, নিয়মানুবর্তিতা, সুব্যবহার এবং পরিমিত জীবনযাপন পছন্দ করেন।
আসুন জেনে নিই কী করলে লক্ষ্মী দেবী প্রসন্ন হবেন-
১। প্রতিদিন স্নান করে শুদ্ধ হয়ে লক্ষ্মী গায়ত্রী মন্ত্র ১০৮ বার জপ করলে মা লক্ষ্মী অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন। এই মন্ত্র জপ করার সময় পদ্মবীজের মালা ব্যবহার করলে ভাল হয়।
২। দক্ষিণাবর্ত শঙ্খকে বলা হয় মা লক্ষ্মীর শঙ্খ। লাল, সাদা বা হলুদ রংয়ের একটি পরিষ্কার কাপড়, একটি রুপোর পাত্র অথবা মাটির পাত্রের উপর রাখতে হয় এই শঙ্খ। এই শঙ্খের মধ্য দিয়েই বাড়িতে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ প্রবাহিত হয়।
৩। বলা হয়, সমস্ত দেবতা বাস করেন তুলসী গাছে। আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী, দেবী তুলসী হলেন মা লক্ষ্মীরই এক রূপ। তাই বাড়িতে তুলসী গাছ থাকলে এবং সেখানে প্রতিদিন প্রদীপ জ্বাললে তুষ্ট হন মা লক্ষ্মী।
৪। টানা ১২ দিন ধরে ভক্তিভরে লক্ষ্মী দ্বাদশ স্তোত্র ১২ বার উচ্চারণ করলে ঋণমুক্তি ঘটে।
৫। একটি বাঁশের বাঁশিকে সিল্কের কাপড়ে মুড়ে ঠাকুরের সিংহাসনে রাখলে মা লক্ষ্মী প্রসন্ন হন কারণ বাঁশি হল বিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়। তাই তা মা লক্ষ্মীরও অতি প্রিয়।
৬। শুধুমাত্র পুজার দিনে নয়, প্রতিদিনই যদি দেবীর পায়ের চিহ্ন আঁকা হয়, তবে ভাল। প্রতিদিন না পারলে বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার এবং মা লক্ষ্মীর পুজোর তিথি থাকলে তো অবশ্যই।
৭। প্রতি শুক্রবার পদ্মমূল থেকে তৈরি নয়টি সলতে দিয়ে একটি মাটির প্রদীপ মা লক্ষ্মীর পট বা প্রতিমার সামনে জ্বাললে তা গৃহে প্রাচুর্যের সমাহার ঘটায়।
৮। প্রতিদিন মা লক্ষ্মীর প্রতিমা বা পটের সামনে দু’টি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালালে তা খুবই ভাল। এর সঙ্গে পদ্ম, নারকেল ও ক্ষীরের নৈবেদ্য দিলে প্রসন্ন হন দেবী।
৯। ঠাকুরঘরে বা ঠাকুরের সিংহাসনে কড়ি এবং শঙ্খ রাখা খুবই শুভ বাড়ির কল্যাণের জন্য।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com