eibela24.com
বৃহস্পতিবার, ২৮, মার্চ, ২০২৪
 

 
ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন উত্তাল শাহবাগ, ৯ দফা দাবি
আপডেট: ১১:২৬ pm ০৯-১০-২০২০
 
 


সারাদেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সরকার। পাশাপাশি গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন করে যাচ্ছে ছাত্র-জনতা।

শুক্রবার বিকালে শাহবাগে অনুষ্ঠিত বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর প্ল্যাটফর্ম 'ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ' আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে ৯ দফা দাবি উত্থাপন কর হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। পাশাপাশি আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত নানা কর্মসূচিরও ঘোষণা দেওয়া হয়। মহাসমাবেশে আসা প্রত্যেকে ধর্ষণবিরোধী প্ল্যাকার্ড, পোস্টার, ব্যানার, প্রতিকৃতি নিয়ে এসেছেন। তারা প্রত্যেকে ধর্ষকদের বিচার দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন।

মহাসমাবেশ আসা বিক্ষোভকারীরা- ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘ধর্ষকের আস্তানায়, আগুন জ্বালো আগুন জ্বালো’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকের ঠাঁয় নাই’, ‘লাঠির বারি মারবি, সামলাতে পারবি না’, ‘বুকের ভেতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়। আন্দোলনকারীরা ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের দাবি জানান। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে পুলিশ ও সরকারদলীয় সমর্থকদের হামলার তীব্র নিন্দা জানান।

এখানেই শেষ নয়, দেশ কাঁপছে ধর্ষণ, গণধর্ষণে। বৃহৎ কর্মসূচি হাতে নেয়াটাই আবশ্যক। আকাশ-বাতাস বিদীর্ণ হচ্ছে নারীর কান্নায়! স্বাধীন বাংলাদেশে নারী আজ রাজপথে বেরিয়ে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হয়েছে ধর্ষকের জন্যে। স্বাধীন দেশে নেই নারীর কথা বলার অধিকার, চলার অধিকার! এ কী প্রকৃতই স্বাধীনতা। মনে স্বাধীনতা কী আমরা পেয়েছি? প্রশ্ন এক আন্দোলনকারীর।

দাবিসমূহ:

১. সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ-নারীর প্রতি সহিংসতার সাথে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ, নিপীড়ন বন্ধ ও বিচারে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।

২. পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সকল প্রকার যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।

৩. হাইকোর্টের নির্দেশনানুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি, বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। সিডো সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল আইন ও প্রথা বিলোপ করতে হবে।

৪. ধর্মীয়সহ সকল ধরনের সভা-সমাবেশে নারী বিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রেণে বিটিসিএলের কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। সুস্থ্য ধারার সাংস্কৃতিক চর্চায় সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। 

৫. তদন্তকালীন সময়ে ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ভিকটিমের আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৬. অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্রাইবুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সকল মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করতে হবে।

৭. ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫(৪) ধারাকে বিলোপ করতে হবে এবং মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করতে হবে।

৮. পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যে কোনো প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছেদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করতে হবে।

৯. গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। 

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স এই ৯ দফা দাবি উত্থাপন করার পর ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শাহবাগে লাগাতার অবস্থান চলবে। 

নি এম/