eibela24.com
বৃহস্পতিবার, ১৮, এপ্রিল, ২০২৪
 

 
পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু দমনের হাতিয়ার হয়ে উঠছে 'ব্লাসফেমি' আইন?
আপডেট: ১১:৩২ pm ১০-০৯-২০২০
 
 


পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনকে কেন্দ্র করে মামলা, হত্যা ও সাজার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে৷ দেশটির বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা থেকে শুরু করে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাও এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে৷

হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান (এইচআরসিপি) জানিয়েছে, গত এক মাসে ৪০টিরও বেশি এমন মামলা নিবন্ধন করেছে পুলিশ৷ এই মামলাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে৷

এইচআরসিপির চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, 'এটা (মামলা) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, যা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উস্কে দিতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা৷'

সবশেষ গত বুধবার ব্লাসফেমি বা ধর্মনিন্দার অভিযোগে এক খ্রিস্টান যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে পাকিস্তানের আদালত৷ ৩৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইসলাম নিয়ে ‘অন্যায়’ এবং ‘অবমাননাকর’ মন্তব্য করেছেন তিনি৷ যদিও তার আইনজীবীর দাবি, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে না চাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ধর্মনিন্দার অভিযোগ করা হয়৷ প্রায় সাত বছর ধরে বিচার চলার পরে মঙ্গলবার নিম্ন আদালত তাকে ফাঁসির সাজা দেয়৷

ব্লাসফেমি আইন

পাকিস্তানে এই আইনের সূচনা হয় সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউল হকের অধীনে ১৯৮০ এর দশকে৷ এই আইন অনুযায়ী ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) কে অবমাননা করলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷ এছাড়া ইসলাম ধর্ম, পবিত্র কোরআনসহ নির্দিষ্ট ধর্মীয় ব্যক্তিদের নিন্দা বা অবমাননায় কারাদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে৷

যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআরএফ)-এর তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে বর্তমানে ৮০ জন এই ‘ব্লাসফেমির অপরাধে' কারাগারে আটক রয়েছেন৷ তাদের অর্ধেকই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি৷

তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সংখ্যালঘুদের দমনে এই আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে৷ অনেক ক্ষেত্রে মুসলিমরাও ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে একজন আরেকজনকে ব্লাসফেমি মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন৷

বিচারের আগেই হত্যা

জুলাই মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানের পেশোয়ারে তাহির নামিস নামে একজনকে বিচার চলাকালে আদালতকক্ষের ভিতরেই গুলি করে হত্যা করা হয়৷ তার বিরুদ্ধে ব্লাসফেমির অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় বিবৃতি দিয়ে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ হত্যাকারীকে ‘ধর্ম যোদ্ধা’ অ্যাখ্যা দিয়ে তার মুক্তির দাবিতে তখন মিছিলও করে কয়েক হাজার কট্টর সমর্থক৷

বিচার চলাকালীন এমন হত্যার ঘটনা পাকিস্তানে এই প্রথম নয়৷ ১৯৮০-র দশক থেকে এখন পর্যন্ত ব্লাসফেমির অভিযোগ আনা হয়েছে এমন ৭৫ জন ব্যক্তি বা কোনো গোষ্ঠীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন৷

এইচআরসিপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, বিচারাধীন ব্যক্তির ভাগ্য মানুষের করুণার উপর ছেড়ে দিয়ে রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন করছে৷

জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরও এ নিয়ে মুখ খুলেছে৷ সংস্থার মুখপাত্র রুপার্ট কলভিলে সাংবাদিকদের বলেন, ব্লাসফেমির অভিযোগ খুবই উদ্বেগজনক৷ কেননা, অভিযুক্ত ব্যক্তি সহিংসতার ঝুঁকিতে পড়ছেন৷  এ বিষয়ে পাকিস্তানের সরকারের কাছে তাঁরা তাদের উদ্বেগ তুলে ধরেছেন বলেও জানান তিনি৷ সূত্র : ডয়েচে ভেলে।

নি এম/