eibela24.com
শুক্রবার, ২৯, মার্চ, ২০২৪
 

 
বাংলাদেশে চীনের সিটি নির্মাণের প্রস্তাব: আশঙ্কা ও সম্ভাবনা !
আপডেট: ১০:৫৪ pm ১৭-০৬-২০২০
 
 


সম্প্রতি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের এক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সহ ছয়টি শহরে চীনের সিস্টার-সিটি নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে চীন। ভারতের গণমাধ্যমের বরাতে এ খবর প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়াসহ পশ্চিমা বিশ্বের বেশ কিছু গণমাধ্যমে। চীন-ভারত উত্তেজনার মধ্যেই ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের এ ধরনের সম্পর্কের আভাস নিশ্চিতভাবেই এ অঞ্চলের কূটনীতির নতুন সীমা নির্ধারণ করে দিতে পারে।

চীন সরকারের ভাষ্যমতে, চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর সিস্টার-সিটি গুলোতে তারা শিল্প-সংস্কৃতি ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিনিময় করবে, শহরগুলোতে ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যসহ অন্যান্য মহামারি নিয়ন্ত্রণে পূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং চীনের উন্নত শহরগুলোর আদলে শহরগুলোকে গড়ে তুলবে।

আমেরিকার ৩৪তম প্রেসিডেন্ট ডেভিড আইজেন হাওয়ার সিস্টার-সিটি ধারণার জনক। দুইটি রাষ্ট্রের ভিন্ন ভিন্ন শহরের মানুষের মধ্যে আন্তনাগরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিনিময়ের মাধ্যমে বন্ধু রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নই ছিল সিস্টার-সিটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য।

আপাতদৃষ্টে লোভনীয় এ প্রস্তাব এতটা সরলতায় কেন দিচ্ছে চীন, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে শঙ্কিত হওয়ারও যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। চীনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম চায়না ডেইলির খবর অনুযায়ী, সিস্টার-সিটি নির্মাণের প্রকল্পগুলো তাদের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প ‘বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)’–এর অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের মাধ্যমে চীন বিশ্বের প্রায় ৭০০টি শহরকে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং ‘ওল্ড সিল্ক রুট’–এর আদলে নতুন বাণিজ্যপথ সৃষ্টি করতে দেদার খরচ করে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় চীন শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর নির্মাণে সহায়তা করে শ্রীলঙ্কাকে ঋণের জালে আবদ্ধ করে ৯৯ বছরের জন্য বন্দরটি লিজের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করেছে। লক্ষণীয়ভাবেই দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল এবং পাকিস্তানের সরকারেও চীনের সম্ভাব্য প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় এবং শ্রীলংকার পরিণতি ভোগ করার আশংকা প্রকাশ করছে ঐদেশের জনগণ। চেনা মিত্র মিয়ানমারের মাধ্যমে এ অঞ্চলের বৃহৎ রাষ্ট্র ভারতকে প্রায় তিন দিক থেকেই ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে চীন। সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে এগিয়ে যাচ্ছে শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে। এ অঞ্চলে ভারতের নিকটতম রাষ্ট্র বাংলাদেশে তাই এখন সব মনোযোগ চীনের। বাংলাদেশ বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পে যুক্ত হতে সমঝোতা চুক্তি করেছে ২০১৬ সালে। এ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে তারা ২৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাবও দিয়েছে, যার একটি বড় অংশ হবে চড়া সুদে ঋণের মাধ্যমে। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ এখনো এ ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দোদুল্যমানতায় রয়েছে। যদিও চীনা লবির কোনো কোনো ব্যক্তি সরকারকে অনাবরত উৎসাহ দিয়ে চলেছে এই ঋণ গ্রহণ করার জন্য।

চীন বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম বড় অংশীদারী রাষ্ট্র, সামরিক মিত্র এবং বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধানতম সঙ্গী। তবে দুই দেশের সমাজব্যবস্থা এবং শিল্প-সংস্কৃতির পার্থক্যের কারণে আন্ত-নাগরিক যোগাযোগে একটি বড় ধরনের ঘাটতি রয়ে গেছে। এই সিস্টার-সিটি প্রকল্প কার্যকর হলে চীন বাংলাদেশের আরও বৃহৎ অঞ্চলে সংস্কৃতি বিনিময়ের মাধ্যমে দেশের অভ্যান্তরিণ রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকান্ডে প্রবেশের সুযোগ পাবে এবং বাংলাদেশের ওপর সম্ভাব্য বৃহৎ ঋণের বোঝা তাদের আরও বেশি আগ্রাসী করে তোলার আশঙ্কা রয়েছে।

চীনের বিআরআই প্রকল্পের মাধ্যমে দেওয়া ঋণের জালে আবদ্ধ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর অবস্থা বিবেচনা করে বাংলাদেশকেও এ সিস্টার-সিটি প্রকল্পের যথেষ্ট পর্যালোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে বিশেজ্ঞগণ মনে করেন। গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ কিভাবে নেয় তা দেখার জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে আছে।

নি এম/