eibela24.com
শুক্রবার, ১৯, এপ্রিল, ২০২৪
 

 
মানবেতর জীবনযাপন করছে ব্যাঙ্গালোরে আটকে পড়া বাংলাদেশীরা !
আপডেট: ১০:৫২ pm ১৭-০৪-২০২০
 
 


https://www.facebook.com/100006289426260/videos/2675074596045495/?id=100006289426260&__tn__=%2CdlC-R-R&eid=ARAlqyrydrRQEik2ati01

১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতে আসি পিশেমসাইকে ডাক্তার দেখাতে। ১৪ মার্চ তার হার্টের বাইপাস সার্জারি হয়। ২০ মার্চ ডিসচার্জ করে, ২২ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী জনতার কার্ফিউ দেন, আমরা সাধুবাদ জানাই। ২৩ তারিখে সেলাই কাটে। অতঃপর চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরবো এটাই স্বাভাবিক কিন্তু তখনো বুঝতে পারিনি লকডাউন নামক ঘোর অমানিশা আমাদেরকে এভাবে গ্রাস করবে। ২৪ তারিখে দেশে ফিরবো অথচ ফিরতে পারলাম না কারণ ২৩ তারিখেই ঘোষণা হয় ২৪ তারিখ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন। আমরা প্রায় ৬০০ বাংলাদেশী শুধু ডঃ দেবী শেঠীর নারায়ণা হৃদয়ালয়া হাসপাতালের আশেপাশেই আছি। পুরো ব্যাঙ্গালোরে ১০০০ এর বেশি বাংলাদেশী আটকে আছি। সমগ্র ভারতে সংখ্যাটা আরো বেশি। আমরা ঠিকমতো বাজার করতে পারি না পুলিশের ভয়ে। সকল প্রকার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনেসের দামও বেড়ে যায়। এদিকে টিকেটে টাকা আটকে যাওয়ায় খাওয়া খরচ ও হোটেল ভাড়া দেওয়ার টাকা থাকে না আমাদের অধিকাংশেরই। বিমান চলল না আমরা টাকাও ফেরত পেলাম না, এজেন্সি বলে টাকা ফেরত হবেনা রিটিকেটে এডজাস্ট হবে। আমরা বুঝতে পারি এই লকডাউন ১৪ এপ্রিল ও শেষ হবে না। তাই আমরা মিডিয়া, এলাকার এমপি, বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ শুরু করি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন আমাদেরকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ হাইকমিশন বলে তথ্য পেলে তারা ব্যাবস্থা নেবে। কয়েকদিন ধরে আমাদের তথ্য নিলো তারা আমাদেরকে দেশে ফেরাবে বলে। বড় আশ্চর্যের বিষয় আমাদের পাঠানো ৪০ টি পাসপোর্ট এর তথ্যের মধ্যে ২০ টি তারা দেখছে বাকি গুলো তারা দেখার ও প্রয়োজন মনে করেননি। বাংলাদেশ হাইকমিশন আমাদেরকে এক একদিন এক এক আশা দেখানো শুরু করে। একদিন বলে তারা চাটার্ড বিমানের ব্যাবস্থা করতে চায়। চেন্নাই থেকে কলকাতা দুইটা ফ্লাইট দেবে আর ব্যাঙ্গালোর থেকে কলকাতা একটা। ২০ লাখ রুপি লাগবে প্রতি ১৬০ সিটের ফ্লাইটে, জনপ্রতি ১২৫০০ রুপি পড়বে। আমরা বলি যেখানে রেগুলার ভাড়া ৩০০০-৫০০০ রুপি সেখানে ১২৫০০ রুপি অমানবিক হয়ে যায় না? আমরা রেগুলার ভাড়াটা দিয়ে যেতে চাই কিন্তু যারা খেতে পাচ্ছে না, হোটেল ভাড়া দিতে পারছে না তাদের কথাও একটু বিবেচনা করুন। এর দুইদিন পর একজনকে বলছে ভেলুর থেকে বাস জোগাড় করতে। সবাই বলে সদ্য সার্জারি করানো ব্যক্তি কি করে যাবে? দুইদিন পর আবার বলে এক একজনের প্রায় ৫০০০০ রুপি লেগে যাবে। তার পরে আবার বলে একবারে ঢাকা পর্যন্ত ফ্লাইট হতে পারে, ২০০০০-২৫০০০ রুপি করে। তার একদিন পরই বাংলাদেশ হাইকমিশন তাদের ফেসবুক পেজে একটি নোটিশ দেয়। নোটিশে বলে ১৪ তারিখের আগে আমরা কিছুই করতে পাররো না। ভারত সরকারের আইন মেনে চলুন, বিলম্ব না করে টিকিট ও করতে বলে। আমরা তাদের নোটিশ মোতাবেক আবারও টিকেট করি।

https://www.facebook.com/100006289426260/videos/2675053666047588/?id=100006289426260&__tn__=%2CdlC-R-R&eid=ARAlqyrydrRQEik2ati01

কিন্তু ১০ তারিখের দিকে জানতে পারি মুখ্যমন্ত্রীরা লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছেন। কোনো কোনো মুখ্যমন্ত্রী আগেভাগেই ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করে দেন। তখন আমরা বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করি। জিজ্ঞাসা করি আদৌ কি বিমান চলবে? উত্তর দেয় আমরা বলতে পারিনা এজেন্সিতে যোগাযোগ করেন। জিজ্ঞাসা করি আপনাদের কাজটা আসলে কি? তারা রেগে যায়। আমরা কয়েকজন ১২ তারিখে লোকাল পুলিশ ষ্টেশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু সময় মতো অনেকেই হাসপাতালের সামনে এসে হাজির হয়। অনেক লোক দেখে হাসপাতালের সিকিউরিটি এসে আমাদের উদ্দেশ্য জানতে চায়। আমরা বলি দেশে ফিরতে চাই। সে পুশ্পা ম্যাডামের সাথে মোবাইলে কথা বলিয়ে দিলে আমাদেরকে পরদিন দেখা করতে বলে। পরদিন ১৩ তারিখে আমি আর অনুপম রায় দাদা হাসপাতালে যাই। পুশ্পা থেকে ত্রয়ী ম্যাডাম, রবি স্যার জেনারেল ম্যানেজার নিতীন বাবুর কাছে পৌঁছাই। অতঃপর আমাদের বার্তা ডঃ দেবী শেঠীর নিকট পোছাই। চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দেন। একদিন পর জানাতে চায়। ১৫ তারিখে বলেন আলোচনা করছি দেখি কি হয়। ডঃ দেবী শেঠীর সেক্রেটারী ঝঙ্কা ছেত্রীর সাথে যোগাযোগ করলে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি আপনারা আপনাদের সরকারকে জানান। ১৬ তারিখে হাসপাতালে যোগাযোগ করলে বলেন আমরা তো চেষ্টা করছি আপনাদের দেশ না নিলে আমাদের দেশ কি জোড় করে পাঠাবে? উত্তর দিতে পারলাম না। এর মাঝেই ভারত সরকার পর্যটকদের জন্য ডিপার্টমেন্ট অফ টুরিজম ইন ইন্ডিয়া নামে একটি ওয়েবসাইট খোলে সেখানে আমরা আবেদন করলে এই ডিপার্টমেন্টের কর্ণাটক রাজ্যের প্রধান রত্নাকর স্যার জানায় বাংলাদেশ সরকার বা হাইকমিশন তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা সাহায্য করবে। স্পেশাল ফ্লাইটের পার্মিশন তাঁরা করিয়ে দেবে। কিন্তু বিমান বাংলাদেশকেই দিতে হবে। 

https://www.facebook.com/100006289426260/videos/2675046282714993/?id=100006289426260&__tn__=%2CdlC-R-R&eid=ARAlqyrydrRQEik2ati01h26hBIygoeTeA0s8SyMVbw23a3z_39nDh2S_eQWiPyoI1YigiXHDq8thjnK&hc_ref=ARRSbfxJ0EEuUq0w5SU0Pk0bu3XMTevyUIASddVb78i9W2QLYS25xJ7f-VDFqZAc7Hg

তিনি এটাও বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ৩৭ টি বিশেষ ফ্লাইট করিয়েছি। অতঃপর আমরা হাইকমিশনার মোঃ ইমরান স্যারের সাথে কথা বলে রত্নাকর বাবুর নাম্বার দেই, ফোন করতে অনুরোধ করি। তিনি বলেন, "এটাতো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দিয়ে যোগাযোগ করতে হবে তাছাড়া আমাদের কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে তবুও যোগাযোগ করবো।" গত পরশু ১৫ তারিখেই হাইকমিশন আমাদের জানিয়ে দিলো ৩ মে এর আগে আমরা কিছুই করতে পারবো না। বিভিন্ন দেশ যেখানে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে সেখানে আমাদের দেশ এই প্রতিবেশী দেশ থেকে কি আমাদেরকে ফেরাতে পারেনা? অবশ্যই পারে।

গত পরশু সৌদি আরব থেকে ৩৬৬ জন দেশে ফিরেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকেও নাকি বাংলাদেশীরা ফিরবে। কিন্তু আমাদের নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই নেই মনে হচ্ছে। আমাদের অপরাধ কি এটাই যে আমরা ভারতে চিকিৎসা নিতে এসেছি? আমরা তো দেশে ফিরে নিয়ম মাফিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে রাজি আছি তবুও কেন দেশে ফিরতে পারবো না? পরিস্থিতি সামনে আরো খারাপ হবে হয়তো আমরা আমাদের অনেক প্রিয়জনকেও শেষ দেখা দেখতে পারবো না। প্রথমে ভেবেছিলাম হাইকমিশনই আমাদের সাথে প্রহসন করছে। আমরা ভুলেই গেছিলাম হাইকমিশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে গ্রিন সিগন্যাল না পেলে ছলনা করা ছাড়া যে তাদের আর কোনো উপায় নেই। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি ভাবছে? আমরা কি এখানে উপার্জন করতে আসছি? ঘুরতে এসেছি? না আমরা চিকিৎসা করাতে এসেছি? আমরা ভারতে চিকিৎসা নিতে এসেছি এটাই কি আমাদের অপরাধ? শুধুমাত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনীহার জন্যেই আমরা দেশে ফিরতে পারছি না।

https://www.facebook.com/100006289426260/videos/2675026972716924/?id=100006289426260&__tn__=%2CdlC-R-R&eid=ARAlqyrydrRQEik2ati01h26hBIygoeTeA0s8SyMVbw23a3z_39nDh2S_eQWiPyoI1YigiXHDq8thjnK&hc_ref=ARRSbfxJ0EEuUq0w5SU0Pk0bu3XMTevyUIASddVb78i9W2QLYS25xJ7f-VDFqZAc7Hg

হে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা আপনার সুদৃষ্টি কামনা করছি। আপনি ছাড়া আমাদের কথা আর কেউই ভাববে না।

নি এম/বিজয় কৃষ্ণ