এখন থেকে ভুলেও কখনো বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে ভারত ভ্রমণ করতে যেয়ে সেখানে থেকে যাওয়ার মানসিকতা পোষণ করবেন না। সকল ইমিগ্রান্টদের ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। আপনি যদি ভারতীয় নাগরিক বনে সকল কাগজ পত্র এমনকি পাসপোর্টও বানিয়ে ফেলেন তবেও আপনার শেষ রক্ষা হবে না। ইমিগ্রেশনে আসলেই ধরা পড়ে যাবেন এবং ভারতে অবৈধ নাগরিক হওয়া ও প্রবেশের দায়ে কমপক্ষে ৭ বছর আপনাকে জেলের ঘানি টানতে হবে এবং আপনার আগের দেশেই ফেরত আসতে হবে। এমনি একটি ঘটনার বর্তমান বাস্তব অবস্থা আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো- ভারতের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, স্কুল ছাড়ার সার্টিফিকেট সমস্ত দেখিয়ে তৈরি করা হয়েছিল ভারতীয় পাসপোর্ট। খড়গপুর ওয়ার্কশপে কর্মরত এক যুবককে বিয়ে করে চলছিল জমজমাট সংসারও কিন্তু শেষরক্ষা হল না।
বুধবার দুপুরে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে খড়গপুর টাউন থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করল ভারতীয় নাগরিকের ছদ্মবেশে থাকা এক বাংলাদেশি নারীকে। খড়গপুর পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ড ভবানীপুর এলাকার দেবলপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই বিদেশিনীকে।
পুলিশ জানিয়েছে, ১৯৪৬ সালের বিদেশী নাগরিকত্ব আইন এবং ১৯৬৭ সালের ১২ পাসপোর্টে আইন সহ আরও কয়েকটি ধারায় মামলা রুজু করে বুধবারই আদালতে পেশ করার পর আরও জিজ্ঞাসা বাদ করার উদ্দেশ্যে ৫দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতের নিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ধৃত বাংলাদেশিনীর নাম জুলি দাস। জুলির বিয়ের আগে পদবি ছিল দে। সে ২০১৮ সালের আগে ভারতে আসে এবং এখানেই থেকে যায়।
জানা গেছে, জুলির একটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছিল যার মেয়াদ ২০১৮ সালের জুলাই মাসেই শেষ হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই ভবানীপুরের দেবলপুরের বাসিন্দা দেবাশিস দাস নামে এক যুবককে বিয়ে করে জুলি। দেবাশিস রেলের ওয়ার্কশপে কাজ করে। এরপর একে একে ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড এমনকি স্কুল ছাড়ার সার্টিফিকেট নিজের নামে বানিয়ে ফেলে সে। তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় সব তথ্য এখনো পুলিশের হাতে আসেনি।
জুলির মা বিধবা জ্যোৎস্না রানী দে সম্ভবত বাংলাদেশেই থাকে(এখনও নিশ্চিত করে বলা যায়নি) মায়ের সঙ্গে দেখা করা কিংবা অন্য কারনে বাংলাদেশ যেতে চাইছিল জুলি আর সেই কারনে সে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট বানানোর উদ্যোগ নেয়। ওই সমস্ত নথিপত্রের ভিত্তিতে জুলি সেই পাসপোর্ট পেয়েও যায় যদিও ভারতের পাসপোর্ট পরিষেবার কলকাতা আঞ্চলিক কেন্দ্র জুলির দেওয়া তথ্যগুলি তখনও ভেরিফেকশন করে যাচ্ছিল। এই ভেরিফেকশন পর্বেই পাসপোর্ট অফিসের কর্তারা জুলির দেওয়া নথি গুলি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে।
২০১৯ সালের আগস্ট মাসে এই ভেরিফিকেশন পর্বেই বোঝা যায় নথি গুলি নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। তাঁরা বিষয়টি পশ্চিম মেদিনীপুর গোয়েন্দা পুলিশ ডিআইবিকে জানান। তদন্ত শুরু করে ডিআইবি প্রাথমিক তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়ার পর ২০২০ জানুয়ারি মাসে ডিআইবির এক সাব ইন্সপেক্টর অমিত অধিকারী একটি মামলা দায়ের করেন খড়গপুর পুলিশের কাছে। খড়গপুর পুলিশ বিস্তারিত তদন্ত ও খোঁজ খবর নিতে থাকে। এরই মধ্যে করোনা এবং লকডাউন শুরু হয়ে গেলে পুলিশ ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এরপর অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলে ফের মামলাটি নিয়ে নড়ে চড়ে বসে পুলিশ। অবশেষে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয় জুলিকে।
পুলিশের প্রাথমিক ধারনা বাবার মৃত্যুর পর মায়ের সাথে ভারতে আত্মীয়দের কাছে এসেছিল জুলি। তারপর এখানে বিয়ে দিয়ে মা বাংলাদেশ চলে গেছেন বা এদেশেরই অন্য কোথাও রয়েছেন। পুলিশ সেটাও খতিয়ে দেখছেন। পুলিশের এও অনুমান ২০১৫ সাল নাগাদ বিয়ে হয়েছিল তাঁর। তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এ সমস্ত কিছুরই হদিস পেতে চাইছে পুলিশ। কী ভাবে কোন পথে জুলি ভারতীয় পরিচয় পত্র জনিত নথি গুলি জোগাড় করেছিলেন তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ আধিকারিক।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com