বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্তের মিয়ানমারের ভেতরে মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে থেমে থেমে ভারি অস্ত্রের গোলাবারুদের শব্দ ভেসে আসছে। এর আগে দুইদিন বন্ধ থাকার পর আবারও গোলাগুলির শব্দে ঘুমধুমের স্থানীয় লোকজনসহ শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তবে, গোলা বাংলাদেশের ভেতরে এসে পড়া কিংবা বাংলাদেশের আকাশসীমায় কোনো হেলিকপ্টার বা যুদ্ধবিমান উড়তে দেখা যায়নি।
মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৭টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এবং পরে বেলা ১টা থেকে বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। একই ভাবে বুধবারও সকাল থেকে থেমে থেমে ভারী গোলাবারুদের আওয়াজ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন ঘুমধুমের স্থানীয়রা।
ঘুনধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সীমান্তের ওপারে দুইদিন ফায়ারিং বন্ধ ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। তবে সীমান্তের আকাশে এখনো কোনো হেলিকপ্টার বা যুদ্ধবিমান উড়তে দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে এলাকার কোনো বাসিন্দা সীমান্ত এলাকায় যেতে চাচ্ছে না। নিষেধ না থাকলেও ভয়ের কারণে ক্ষেত-খামারে যাচ্ছে না স্থানীয় বাসিন্দারা। সীমান্তজুড়ে বিজিবি সার্বক্ষণিক সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
শূন্যরেখার অবস্থান করা রোহিঙ্গা মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ২০১৭ সালের নিপীড়নের সময় পালিয়ে এসে মিয়ানমার-বাংলাদেশ শূন্যরেখায় সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পরিবার-পরিজন নিয়ে অবস্থান করছে। মিয়ানমারের ভেতরে গোলাগুলি বেশি হচ্ছে। তারা সীমান্তে সৈন্যও বাড়িয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তারা টহল দিচ্ছে দিন-রাত।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রায় এক মাস ধরে সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ২৮ আগস্ট পর পর দুইটি মর্টারশেল এসে পড়েছিল সীমান্তের তুমব্রু উত্তরপাড়ায়। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর আরও দুটি মর্টারশেল পড়ে বাংলাদেশের বাইশপারি এলাকায়। বেশ কিছুদিন ধরে সীমান্তে গোলাগুলি, গোলাবর্ষণ ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে মিয়ানমার সৈন্যরা। যার কারণে এখনো উৎকণ্ঠা কাটছে না সীমান্তবর্তীদের। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না লোকজন। অনেকেই গবাদি পশুও গোয়ালে বেঁধে রেখেছেন।
ঘুমধুমের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হামিদুল আলম বলেন, দুইদিন গোলাগুলি বন্ধ থাকার ফলে সীমান্তের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পায়। কিন্তু মঙ্গলবার আবারও আতঙ্ক ভর করেছে মানুষের মাঝে। গোলাগুলি আংতকে এখন বাচ্চাদের স্কুলে যেতেও দিচ্ছে না অভিভাবকরা।
সীমান্তের এক সূত্র জানায়, মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান আর্মি (এএ) গেল সপ্তাহে সে দেশের একটি বিজিপি ক্যাম্পে হামলা চালানোর পর থেকে ছোট ছোট ক্যাম্প এখন সেনাশূন্য হয়ে পড়েছে বলে মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের বরাতে দাবি করা হচ্ছে।
তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের পশ্চিম আরাকানে সে দেশের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সঙ্গে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির তীব্র লড়াই চলছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে পশ্চিম ও উত্তর আরাকানের দুর্গম পাহাড় ও গহিন জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষ চলমান।
সীমান্তের নানা সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়গুলোর অবস্থান হলো পশ্চিম ও উত্তর আরাকান এলাকায়। ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর নিপীড়নের কারণে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের এমন মোক্ষম সময়েই আরাকান আর্মির বিপুল সদস্য উঁচু পাহাড়গুলোতে ঘাঁটি স্থাপন করে। এখন তারা সেদেশের সেনা ও বিজিপির সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে রাখাইন রাজ্যের স্বাধীনতা চাচ্ছে।
উল্লেখ্য, বান্দরবানের ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছে ২২ হাজারের বেশি আর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করছে সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা।
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com