ধানকণ্যা নামে খ্যাত বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী ড. তমাল লতা আদিত্য। বাংলাদেশে উন্নত জাতের ধান উদ্ভাবন ও জনপ্রিয়তাকরণে অসাধারণ অবদান রেখে চলেছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) পরিচালক ও ধানকণ্যা নামে খ্যাত বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী ড. তমাল লতা আদিত্য।
গত বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তিনি স্বামী ও দুই পুত্রসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
ড. তমাল লতা আদিত্য ধান প্রজননবিদ হিসাবে অনেকগুলো ধানের জাত উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কাজে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বিশেষ করে ব্রি ধান ৫৭, ব্রি ধান ৫৮, ব্রি ধান ৬৩, ব্রি ধান ৭০, ব্রি ধান ৮০, ব্রি ধান ৮১, ব্রি ধান ৮২, ব্রি ধান ৮৮, ব্রি ধান ৯০ এবং ব্রি ধান ৯৫ ধানের জাতগুলো উদ্ভাবনে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন। এছাড়াও ব্রি ধান ৪৬, ব্রি ধান ৪৯, ব্রি ধান ৫০, ব্রি ধান ৫৬, ব্রি ধান ৭১ জাতসমূহ উদ্ভাবনে তাঁর অবদান ছিল।
ধান গবেষণায় কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ড. তমাল লতা আদিত্য বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। তার নেতৃত্বে ব্রি-র উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার অর্জন করে। ড. আদিত্য আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জয়া আলোকিত নারী ২০২০ সম্মাননায় ভূষিত হন। ড. তমাল লতা আদিত্য ব্রির গবেষণা কর্মসূচী প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণা জার্নালে তার ৩০টির বেশি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
ড. তমাল লতা আদিত্য ৩১ অক্টোবর ১৯৬৭ সালে ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার কুন্ডল বালিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৃত্যুঞ্জয় আদিত্য এবং মাতার নাম সুনীতি রাণী আদিত্য। তিনি ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং ২০০২ সালে ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ প্রজনন এবং বায়োটেকনোলজি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২১ নভেম্বর ১৯৯৪ সালে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে ব্রির উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ৯ আগস্ট ২০১০ সালে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে পদন্নোতি লাভ করেন। এছাড়া গত ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর তিনি পরিচালক গবেষণা (চলতি দায়িত্ব) পদে যোগদান করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন।
এভাবেই নিরবে চলে যাবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা, নিরবে, অভিমানে!
নি এম/