হিন্দুধর্ম অনুযায়ী, বিপদ থেকে মুক্তি পেতে মা বিপত্তারিণীর আরাধনা করার রীতি বহু যুগ ধরে প্রচলিত। গৃহের সবার মঙ্গল কামনার্থে বাড়ির মহিলারা এই পুজো নিষ্ঠাভরে করে থাকেন। এই পুজোর পরে অনেকেই হাতে তেরোটি লাল সুতো দিয়ে দূর্বাঘাস বেঁধে ধাগা ধারণ করেন। এটি পুরুষদের ডান এবং মহিলাদের বাম হাতে ধারণ করাই নিয়ম।
হিন্দু শাস্ত্র মতে, মা বিপত্তারিণী দেবী দুর্গার ১০৮টি অবতারের একটি রুপ। হিন্দুরা মূলত বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য এই দেবীর পূজা করেন। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া থেকে দশমী পর্যন্ত এই দেবীর পুজো করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে যেকোনও শনি বা মঙ্গলবারে এই ব্রত পালন করা হয়।
পূজা বিধি: বিপত্তারিণী ব্রত পালনের আগের দিন বা সেই দিন নিরামিষ আহার গ্রহণ করতে হয়। পুজার দিন তেরো রকম ফুল, তেরো রকম ফল, তেরোটি পান ও তেরোটি সুপারি এবং তেরো গাছা লাল সুতোর মধ্যে তেরো গাছা দূর্বাঘাস সহযোগে তেরোটি গিঁট বেঁধে ডুরি তৈরি করতে হয়। এরপর, আম্রপল্লব দিয়ে ঘট স্থাপন করে ব্রাহ্মণ দ্বারা পূজা করতে হয়। বিশ্বাস অনুযায়ী, বিপত্তারিণী ব্রত পালন করলে সকল মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় এবং সমস্ত বিপদ, বাধা বিঘ্ন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বিপত্তারিণী ব্রতর কাহিনী: বিদর্ভ দেশে কৌটিল্য নামে এক রাজা বাস করতেন। রানী ছিলেন অত্যন্ত ভক্তিমতী ও প্রজাবৎসল। তিনি নিষ্ঠা সহকারে দেবীর আরাধনা করতেন। একবার এক চামারিণীর সাথে রানীর দেখা হলো। তিনি প্রায়ই নানা ফলমূল ও খাদ্যদ্রব্য সেই চামারিণীকে দান করতেন। চামারিণী ছিল খুবই গরিব। তবু ও তার বড় ইচ্ছা রাণীকে কিছু উপহার দেয়। রাণী রোজই বলেন দরকার মতো চেয়ে নেব। কিন্তু সেই চাওয়া আর হয়ে ওঠে না্হ ।
একদিন রাণির খুব ইচ্ছা হলো গোমাংস দেখার। সে চামারিণীকে বলল, তোমরা তো গোমাংস রান্না কর, আমাকে একটু গোমাংস এনে দেখাতে হবে। চামারিণী ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, মহারাণী, মহারাজা যদি একবার সেই কথা শুনে তাহলে আর রক্ষে থাকবে না। তিনি নিশ্চয় আমাকে প্রাণদণ্ড দেবেন। রানী বললেন, তুমি তো মাংস লুকিয়ে আনবে, কেউ তো দেখতে পাবে না, এমনকি কাক পক্ষী ও টের পাবে না। শেষ পর্যন্ত চামারনী রাজি হয়ে একদিন মাংস নিয়ে রাজভবনে লুকিয়ে লুকিয়ে এল। কিন্তুবিধির লিখন খন্ডায় কে! রাজবাড়ির এক চাকর ঠিক দেখে নিল সব। সে রাজার কাছে গিয়ে সব বলে দিল। রাজা রাণীর কাছে তখনই ছুটে এসে সব সত্যি কথা বলতে বললেন নচেৎ প্রাণদণ্ড দেবেন। রাণী পড়লেন মহাবিপদে।
তিনি রাজাকে বললেন, তুমি একটু অপেক্ষা করো। আমি পূজা সেরে আসছি। এ কথা বলে তিনি মন্দিরের ভিতর ঢুকে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে একমনে ডেকে চললেন মা বিপদনাশিনীকে। ভক্তের ডাকে দেবীর আসন টলে উঠলো। তিনি রানীর কানে-কানে বললেন, দেখো গে মাংস পূজার ফল পুষ্প হয়ে আছে। সেই ফল রাজাকে খেতে দাও দেখবে রাজার মন ভাল হয়ে গেছে। রানী তারপর পূজা শেষ করে সেই মাংসের ঢাকনা খুলে একেবারে অবাক হয়ে গেলেন। তারপর রাজাকে এনে দেখালেন সব কিছু। রাজা মনে মনে খুব অনুতপ্ত হয়ে রাণীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন। এভাবে মায়ের ব্রত দিকে দিকে প্রচার হল।
নি এম/