কুশল চক্রবর্ত্তী
কুংফু কারাটের নাম আসলেই সবার আগে আমরা চীনের নাম নেই, কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা কুংফু ক্যারাটে হল প্রাচীন ভারতীয় আত্মরক্ষার এক প্রায়োগিক বিদ্যার চৈনিক সংস্করণ। এ বিদ্যার জনক হলেন দক্ষিণ ভারতীয় এক সন্ন্যাসী, যাঁর নাম বোধিধর্ম। ভারতের কেরালাতে আত্মরক্ষার এ বিদ্যা এখনও কালারিপাট্টু নামে চলমান আছে। এ কালারিপাট্টুর স্রষ্টা হলেন ভগবান পরশুরাম।
বোধিধর্মের জন্ম সন নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। তবে তিনি যে প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বের এটা নিশ্চিত। কারণ খ্রিস্টাব্দ তৃতীয় শতাব্দী থেকেই পল্লব সাম্রাজ্যের সূত্রপাত হয়। এ বৃহৎ সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল কাঞ্চীপুরম্। দক্ষিণ ভারতের এ কাঞ্চীপুরম্ নগরেই পল্লব মহারাজের তৃতীয় সন্তান হিসেবে জন্ম নেয় বোধিধর্ম ।
চীনের বিখ্যাত সাওলিন টেম্পলে আজও বোধিধর্মকে বুদ্ধদেবের অবতার হিসাবে পূজা করা হয়। অথচ আমরা ভারতবর্ষের অনেকে তাঁর নামই জানিনা। অবশ্য এর একটি কারণও আছে। কারণ আমরা হলাম আত্মঘাতী ইতিহাস বিস্মৃত একটি সম্প্রদায়।
বোধিধর্ম পল্লব রাজমাতার আদেশে দক্ষিণ ভারত থেকে তিনবছর পরিভ্রমণ করে চীন দেশে গেলে চীনের এক রাজা তাকে প্রথমে আপ্যায়ন সমাদর করে পরবর্তীতে অহেতুক ভুল বোঝে। বোধিধর্ম এরপরে রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে তাদের সাথে বাস করেন। সেই সময়ে তাদের বর্তমান করোনা ভাইরাসের মত ভয়ংকর ছোয়াছে মহামারীর উৎপাত শুরু হয়। বোধিধর্ম নিজ হাতে আয়ুর্বেদীয় ওষুধ তৈরি করে মহামারীর হাত থেকে চৈনিকদের রক্ষা করেন। তিনি রাজপুত্র হয়েও সন্ন্যাসির মত খুব সাধারণ জীবনযাত্রা নির্বাহ করতেন।
বোধিধর্ম বিভিন্ন বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে চৈনিকদের আত্মরক্ষার সকল কৌশল শিখিয়ে দেন। তিনি ছিলেন একাধারে যোদ্ধা, চিকিৎসক, দার্শনিক, সন্ন্যাসী । তিনি ছিলেন সম্মোহন বিদ্যায় পারদর্শী। আমৃত্যু তিনি অসংখ্য দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময়ের ওষুধ বানিয়ে ছিলেন; অবশ্য যা পরবর্তীতে চীনদেশের মেধাসম্পত্তি হয়ে যায়। দক্ষিণ ভারতে বোধিধর্মকে নিয়ে বহু প্রবাদ আজও প্রচলিত।
সারা জীবন চীনের মানুষের জন্যে কাজ করে শেষ জীবনে বোধিধর্ম যখন নিজ দেশে ভারতবর্ষে ফিরতে চান, তখন চৈনিকদের স্বভাবসূলভ বিশ্বাসঘাতকতায় তাঁর আর নিজ দেশে ফেরা হয়নি। দেশে ফেরার আগের দিন সকল গ্রামবাসী তাকে সম্মান জানিয়ে একটি ভোজের আয়োজন করে। বোধিধর্ম সে ভোজের খাবার হাতে নিয়েই বুঝতে পারেন যে খাবারে বিষ মেশানো। তখন তিনি বলেন, "সারাজীবন তোমাদের জন্যে সমর্পণ করার পরেও তোমরা আমার খাবারে বিষ দিয়ে আমাকে কেন মেরে ফেলতে চাচ্ছ?" উত্তরে অকৃতজ্ঞ চৈনিকরা বলে, "আমরা আপনাকে চাই, জীবিত অথবা মৃত। আপনাকে আমরা আপনার দেশে যেতে দেব না। " উত্তর শুনে বিস্মিত মর্মাহত বোধিধর্ম বলেন, "আমি হাসিমুখেই এ অকৃতজ্ঞতার বিষ গ্রহণ করলাম। "এভাবেই অকৃতজ্ঞ চিনারা প্রায় দুইহাজার বছর পূর্বে হত্যা করে বোধিধর্মকে অর্থাৎ কুংফু-কারাটের জনককে।
ভারববর্ষের সন্ন্যাসী বোধিধর্মার সাথে যা হয়েছে, ভারত সহ প্রত্যেকটি জাতির সাথে সেই একই অকৃতজ্ঞতা, বিশ্বাসঘাতকতা আজ এ একবিংশ শতাব্দীতেও করে চলছে চীন।
আজ সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাসের ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। এ ভাইরাস ছড়িয়েছে চীন থেকে। চিনের উহান প্রদেশ থেকেই এ মারণ ভাইরাস একের পর এক দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে স্পেন, ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, আরব, ভারত, বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে। এর প্রভাবে প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
আজ এ কথাটি অনেকেই বলছেন, করোনা কোনও প্রাকৃতিক ভাইরাস নয়, এর আবিষ্কার হয়েছে চিনের গবেষণাগারে। তাদের অভিযোগ, বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি হতে পৃথিবীর শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে চীনের গবেষণাগারেই তৈরি হয়েছে এ করোনা মারণ ভাইরাস নামক জৈব অস্ত্র । নিউ অরল্যন্সের তুলান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট রবার্ট গ্যারিও বলেছেন, উহানের ভাইরাস গবেষণাগারের লাগোয়া মাছবাজার থেকেই এ ভয়ংকর ভাইরাসটি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ অনেকেই করোনাকে চাইনিজ ভাইরাস বলে বারবার অভিহিত করেছেন।
Covid-19 যে চিনের তৈরি জৈব মারণাস্ত্র এটা শতভাগ নিঃসন্দেহে বলার সময় হয়তো এখনও আসেনি ; কারণ এর কোন চাক্ষুস প্রমাণ নেই। তবে এটা সত্য যে, সার্স, হান্টা সহ একই ধরনের নানা ভাইরাসজনিত রোগের উৎপত্তি স্থল চীন। তবে করোনা ভাইরাস নিয়ে তথ্য গোপনের দায় চীন কখনই এড়াতে পারবে না। তথ্য গোপনের কারণেই ভাইরাসটি সারা পৃথিবীময় ছড়িয়ে পরেছে।
আজ একের পরে এক দেশ যখন লগডাউন হয়ে যাচ্ছে, তখন চীনে মৃত্যুর সংখ্যা শুন্যে নেমে এসে যাপিত জীবন স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। সবথেকে আশ্চর্যজনক বিষয় করোনা চীন থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় শহরগুলোকে পর্যদুস্ত করে জনজীবনকে স্তব্ধ করে দিয়েছে; কিন্তু চিনের বেইজিং সহ বড় শহরগুলোকে আক্রান্ত করতে পারেনি। এর থেকে বিস্ময়ের আর কিইবা থাকতে পারে!
চিনের বর্তমান গতিপ্রকৃতি দেখে আমার বাঙালির একটা প্রবাদই বারবার মনে পরছে তা হল, "নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গ।"
এমন অন্যের ক্ষতি করার মানসিকতা যুক্ত আত্মঘাতী, অকৃতজ্ঞ, মানবসভ্যতা বিধ্বংসী মানুষ পৃথিবীতে হাজার হাজার বছর পূর্বে বোধিধর্মের সময়েও ছিল, হয়তো আগামীতেও তাদের কুৎসিত সিলসিলা জারি থাকবে। আমরা জানিনা এর থেকে উত্তরণের কি পথ!
নি এম/